ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫ ২০:১৫ পিএম
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫ ২০:২১ পিএম
ফেনী মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা রিতা রানী দাশ ও সহযোগী সবিতা রানী দাশের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় রফাদফা করা হয়েছে।
শনিবার (৩১ মে) রাতে রোগীর স্বজনরা ও রিতা রানীর স্বজনরা নবজাতকের মৃত্যু ও প্রসূতির চিকিৎসা বাবদ এই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোয় রিতা রানী দাশ ও সবিতা রানী দাশকে ফেনী মডেল থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত শুক্রবার দুপুরে ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদের স্ত্রী নুর নাহার মিতুর (২০) প্রসববেদনা উঠলে স্বজনরা তাকে ফেনী মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। এখানে দীর্ঘ সময়ের চেষ্টায় ডেলিভারি করাতে না পারলে স্বজনরা রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু রিতা রানী দাশ তাদের সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করানোর অভয় দিয়ে সিজার করেন। সন্ধ্যা ৭টায় একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন মিতু। প্রসবপরবর্তী সময়ে প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েন ও নবজাতকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এ সময় কর্তব্যরত রিতা রানী দাশ ও তার সহযোগী সবিতা রানী দাশ নবজাতককে চিকিৎসা না দিয়ে প্রসূতির স্বজনদের কাছে ৫ হাজার টাকা বকশিশ দাবি করেন। পরে মা ও শিশুর জটিল সমস্যা দেখা দিলে নিরুপায় হয়ে তাদের ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটি মৃত বলে জানান। এতে রোগীর স্বজনরা রিতার অবহেলায় তাদের নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
পরে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে রিতা রানী দাশ, সবিতা রানী দাশ ও দারোয়ান মেহেরাজ ফেনী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ প্রসূতির স্বীকারোক্তি নিয়ে তা রেকর্ড করার চেষ্টা করেন। এ সময় উপস্থিত রোগীর স্বজন ও হাসপাতালে থাকা জনতা রিতা, সবিতা ও মেহেরাজকে মারধর করে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে ফেনী মডেল থানার পুলিশ রিতা রানী দাশ ও সবিতা রানী দাশকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ সময় মেহেরাজ পালিয়ে যায়।
শনিবার সারা দিন দফায় দফায় বৈঠক শেষে নবজাতকের মৃত্যু ও প্রসূতির চিকিৎসা বাবদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা পরিশোধ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী জানান, এই পরিদর্শিকার বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক অভিযোগ উঠেছে।
মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ ডা. নাসিরন আক্তার মুক্তা জানান, গত শুক্রবার দুপুরে নুর নাহার মিতু নামের প্রসূতি হাসপাতালে এলে দায়িত্বরত নার্স ও পরিদর্শিকা আমাকে অবহিত না করে ও রোগীকে ভর্তি না করিয়ে ডেলিভারির চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় জেলা হাসপাতাল থেকে রিতা রানী দাশ ও সবিতা রানী দাশকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। শুনেছি উভয়পক্ষে সমঝোতা হয়েছে।
ফেনী মডেল থানার এসআই মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বাদী প্রথমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে উভয়পক্ষে আপস মীমাংসা হওয়ায় বাদীর লিখিত অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি শুনেছি, শিশু মৃত্যুর সঙ্গে রিতা রানী দাশ জড়িত থাকলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।