× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তিন দশকের পথচলায় ‘জীবনতরী’

রেজাউল করিম, গাজীপুর

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫ ১০:৩৪ এএম

গাজীপুরের কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নোঙর ফেলেছে ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবনতরী’

গাজীপুরের কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নোঙর ফেলেছে ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবনতরী’

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আর এই দেশের নদীর পাড় ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে একটি হাসপাতাল। ভাবতে অবাক লাগলেও এটি চালু আছে প্রায় তিন দশক ধরে। ভাসমান একটি জাহাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত দাতব্য হাসপাতাল ‘জীবনতরী’।

দেশের বিভিন্ন নদী ঘুরে এই হাসপাতাল এখন গাজীপুরের কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পারে। কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দড়িসোম গ্রামের খেয়াঘাট সংলগ্ন খাদ্যগুদামের সামনে স্থানীয় বাসিন্দাদের নামমাত্র ফিতে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জীবনতরীর চিকিৎসা স্থানীয়দের মাঝে সাড়া ফেলেছে। স্বল্প খরচে মানসম্মত চিকিৎসা পেয়ে প্রান্তিক লোকজন সন্তুষ্ট।

হাসপাতালটি ১২ শয্যার। এতে তিনজন চিকিৎসক দিয়ে নাক, কান, গলা ও চক্ষু চিকিৎসা ও বিশেষজ্ঞ সার্জন দিয়ে অস্ত্রোপচার এবং হাড়জোড়া, হাড়ভাঙা, পঙ্গু, জন্মগত ঠোঁটকাটা-তালুকাটা রোগীদের চিকিৎসা, প্লাস্টিক সার্জারিসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, সংস্থাটি ১৯৯৩ সালের ২৫ জুলাই ট্রাস্ট হিসেবে নিবন্ধিত হয়। ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে ‘জীবনতরী’ নামে পরিচিত হয়। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি ভাসমান হাসপাতাল চালু করা হয়। দেশের প্রধান প্রধান নদীপাড়ের মানুষ, যারা শহর বা নগরে খুব কমই যেতে পারে, তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত।

সূত্র আরও জানায়, বেসরকারি সংস্থা ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পরিচালনাধীন হাসপাতালটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নোঙর ফেলে গত ৬ মে। সেবা শুরু করে ১০ মে থেকে। সুচিকিৎসা প্রদান করে ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেছে। সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে। এর আগেও ভাসমান এ হাসপাতাল জীবনতরী কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা পাড়ে ২০১৩ ও ২০১৮ সালে দুবার নোঙর করে স্থানীয়দের সেবা দিয়ে গেছে।

রোগীরা জানান, মানুষ হাসপাতালে যায় চিকিৎসা নিতে কিন্তু হাসপাতালই রোগীর বাড়ির ঘাটে আসে, এটি আগে দেখিনি। দেখালাম, চিকিৎসা নিলাম। সবকিছুই ভালো লেগেছে।

এই হাসপাতালে চোখের চিকিৎসা করানো কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দুর্বাটি গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, আমার ডান চোখে ছানি ছিল। বেশ কয়েক জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছি। পুরোপুরি ভালো হয়নি। কিছুদিন আগে ভাসমান হাসপাতালে চোখে অস্ত্রোপচার করিয়েছি। এখন আর চোখে সমস্যা নেই। শুধু তিনি নন, তার মতো অনেকেই এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট।

সূত্রে জানা গেছে, ভাসমান হাসপাতালে প্রতিদিনই ১৬০ থেকে ১৭০ জন দরিদ্র নারী-পুরুষ ও শিশু দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসক দল যত্নের সঙ্গে তাদের সেবা দিচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা এসব সুবিধাবঞ্চিত রোগী চিকিৎসকদের সেবায় মুগ্ধ।

কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালটি ১২ শয্যার। চিকিৎসক তিনজন। এর মধ্যে একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ, একজন চোখের, একজন অর্থোপেডিকসের। তিনজন নার্স, দুজন কর্মকর্তাসহ মোট ৩০ জন জনবল আছে হাসপাতালে। মুমূর্ষু রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য একটি স্পিডবোট ও একটি অ্যাম্বুলেন্স আছে। এখানে নিয়মিত এক্স-রে, রক্তসহ নাক-কান-গলা, চোখ অর্থোপেডিকস রোগের যাবতীয় পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে।

হাসপাতালটিতে স্বল্প মূল্যে চক্ষু রোগের চিকিৎসা করা হয়। লেন্স সংযোজনের মাধ্যমে চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়। ভাসমান হাসপাতালে ফ্যাকো সার্জারিরও ব্যবস্থা আছে। পঙ্গু রোগীদের সহায়ক সামগ্রী দেওয়া হয়।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, বাইরের একটি ঘর থেকে রোগীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। আবার সারিতে দাঁড়িয়ে ভাসমান হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, অন্য হাসপাতালের মতো এখানে স্বল্প পরিসরে সবই আছে। অপারেশন থিয়েটার, পোস্ট অপারেটিভ রুম, রোগীদের শয্যাসহ অন্যান্য সুবিধা।

জানতে চাইলে হাসপাতালের প্রশাসক একেএম শহিদুল হক বলেন, এ পর্যন্ত ভাসমান হাসপাতালটিতে স্বল্প মূল্যে প্রতিদিন দেড় শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চক্ষুরোগ, ইএনটি, অর্থোপেডিক ও ঠোঁটকাটা রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। ভাসমান এই হাসপাতালে সরকারি ছুটি ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা চলে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা