হাবিব ওসমান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫ ১০:০১ এএম
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা একমাত্র আধুনিক আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি তিন মাস ধরে অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সনোলজিস্ট না থাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ রোগীরা, বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ। বাধ্য হয়েই তাদেরকে দ্বিগুণ-তিনগুণ খরচে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবা নিতে হচ্ছে। রোগ নির্ণয়ের আধুনিক এ প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারণে রোগীরা যেমন সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি মূল্যবান যন্ত্রটিও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্মবিত্ত মানুষ। তবে, কবে নাগাদ আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটির সেবা কার্যক্রম নিয়মিত হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৫ জুন জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) থেকে হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি প্রদান করা হয়। মেশিনটি স্থাপনের পর থেকে ২৯৬ টি আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ সনোলজিস্ট থাকার কথা থাকলেও উপজেলা হাসপাতালটির জনবল কাঠামো অনুযায়ী সনোলজিস্ট পদ নেই। পূর্বের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন নিজে বিশেষজ্ঞ সোনোলজিস্ট না হলেও আল্ট্রাসনোগ্রাম করতেন। তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে রোগীদের রোগ নির্ণয়ের সহজ ও আধুনিক এই যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেশিনটি ব্যবহার করে আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে প্রেগনেন্সি জনিত আল্ট্রাসনো ১১০ টাকা, আর পুরো পেটের আল্ট্রাসনোতে ২২০ টাকা ব্যায় হয়। একই আল্ট্রাসনো বেসরকারি হাসপাতালে বা ডায়গনস্টিক সেন্টারে করতে খরচ ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা। ফলে হাসপাতালের আল্ট্রাসনো কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়েই বেসরকারী হাসপাতালে বা ডায়গনস্টিক সেন্টারে বাড়তি টাকা দিয়েই আল্ট্রাসনো করছেন রোগীরা।
সম্প্রতি কথা হয় সাঁথিয়া নামের এক রোগীর সাথে। তিনি পেটের সমস্যা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন। ডাক্তার তাকে দেখে আল্ট্রাসনো করার পরামর্শ দিলেও অর্থাভাবে আল্ট্রাসনো করতে পারেননি তিনি। কেননা হাসপাতালের আল্ট্রাসনো বিভাগে গিয়ে জানতে পারেন মেশিনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কাছে বেশি টাকা না থাকায় আল্ট্রাসনো না করে বাড়ি ফিরে যান সাথিয়া।
এ সময় আরও কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, বর্তমানে আল্ট্রাসনো সেবা বন্ধ থাকা রীতিমতো দুঃখজনক। এই সেবা নিয়মিত চালু রাখার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজন। অন্যথায় দুর থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মানুষেরা পড়ছে ভোগান্তিতো, আর্থিকভাবে হবেন হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থ।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আসমা খাতুন জানান, একমাত্র আল্ট্রাসনো মেশিনের কার্যক্রম দীর্ঘদিন চলমান না থাকায় একদিকে যেমন সাধারণ রোগীরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে মূল্যবান এই মেশিনটিও সক্রিয়তা হারাচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. রেজাউল ইসলাম জানান, সোনোলজিস্ট না থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি চালানো হচ্ছে না। বন্ধ রয়েছে আল্ট্রাসনো কার্যক্রম। কবে নাগাদ মেশিনটির কার্যক্রম নিয়মিত হবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না হলেও বিভাগটি সচলের চেষ্টা চলছে।