এম আর ইসলাম রতন, নওগাঁ
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫ ০৯:৫৭ এএম
জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। ছবিটি নওগাঁর মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া হাটের
নওগাঁয় জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। জেলায় ৩৮ হাজার ৬শ খামারিসহ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ কোরবানির পশু। এগুলো ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন হাটে উঠতে শুরু করেছে
ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে জমজমাট কোরবানির পশুর হাট। এবারও বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদাই বেশি। তবে দাম নিয়ে আছে নানা অভিযোগ। কোরবানির পশুর হাটগুলোয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাটগুলোয় গরুর সুস্থতা যাচাইয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে ও জাল নোট পরীক্ষার জন্য নিয়োজিত আছে ব্যাংক প্রতিনিধি।
এ বছরও কোরবানির পশুর দাম বেশি বলে জানান ক্রেতারা। অপরদিকে গো-খাদ্যের যে দাম তাতে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বে বলে জানান খামারিরা।
বিক্রেতারা বলছেন, ‘হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরুর কেউ কিনতে চাইছেন না। বড় আকারের গরুর ক্রেতা কম থাকায় দুশ্চিন্তায় খামারিরা। এ ছাড়াও হাটগুলোয় গরুর সরবরাহ বেশি হওযায় খরচের তুলনায় তেমন দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন খামারিরা। এতে শঙ্কায় খামারি ও প্রান্তিক চাষিরা।
ক্রেতারা বলছেন, ‘ঈদের এখনও কদিন বাকি। এখন গরু কিনলে বাড়িতে রেখে লালন-পালন কষ্টসাধ্য হবে। তাই ঈদের দুয়েক দিন আগে গরু কিনলে রাখা নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হবে না। ফলে শেষের দিকে গরু কেনার অপেক্ষায় আছেন তারা। তবে গতবারের চেয়ে গরুর দাম বেশি বলে দাবি তাদের।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এ বছর জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৮ হাজার ৫৭৩টি খামারে দেশীয়, অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩২০টি গবাদিপশু লালনপালন করা হয়েছে। জেলায় চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৭টি পশু। এসব গরু বেচাকেনার জন্য জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় ৩৬টি হাট বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও উদ্বৃত্ত পশু দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করবেন ব্যবসায়ীরা।
জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া, সতিহাট, মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজি, রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর। এসব হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে দুপুর ১২টার পর থেকেই বিভিন্ন জাতের ও আকারের গরু নিয়ে আসতে শুরু করছেন খামিরা, প্রান্তিক চাষি ও ব্যাপারীরা। দুপুর ২টার পর থেকে কানায় কানায় ভরে যায় হাটগুলো। এরপর ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতে জমজমাট হয়ে ওঠে। হাটগুলোয় ভারতীয় গরু না থাকায় দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি।
জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট চৌবাড়িয়া। এই হাটে মহাদেবপুর উপজেলা থেকে আসা খামারি আব্দুর রহমান বলেন, ‘হাটে প্রচুর দেশি গরু উঠেছে। গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় গরু লালন-পালনে গরুপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা বেশি খরচ পড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় দাম মিলছে না।
আরেক খামারি খায়রুল মণ্ডল বলেন, ‘আমার খামারে ১২টি ষাঁড় পালন করেছি। ২২ লাখ টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। ব্যাপারীরা এসে ১২টি গরু ২০-২২ লাখ টাকা দাম করছে। এতে লোকসানের আশঙ্কা করছি।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহফুজার রহমান বলেন, ‘সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে পশু লালন-পালনে খামারিদের উৎসাহিত করা হয়েছে।’ নওগাঁর পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ার বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘জেলার হাটগুলোয় কেউ যাতে গবাদিপশুর ওপর অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে না পারে, তার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান রাখা হয়েছে।’