আনিসুর রহমান, রাউজান (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৫ ২২:১৩ পিএম
আপডেট : ৩০ মে ২০২৫ ২২:৩৬ পিএম
হালদা নদী থেকে দেশের সোনাখ্যাত মাছের ডিম সংগ্রহ করছেন আহরণকারীরা। প্রবা ফটো
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস) মা মাছ। গত বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে মাছ ডিম ছাড়া শুরু করে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় দ্বিতীয় দফায় মা মাছ নমুনা ডিম দেয়। এতেই পরিবেশ অনুকূল দেখে বুকভরা আশা নিয়ে নৌকা, জাল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিয়ে নদীতে অবস্থান নেন সংগ্রহকারীরা। যদিও এর আগে অমাবস্যা এবং পূর্ণিমার ৩টি জোঁ (তিথি) পার হলেও উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় ডিম দেয়নি মা মাছ। শুক্রবার (৩০ মে) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের উল্লেখযোগ্য এলাকায় নৌকা নোঙর করে বিশেষ জাল ব্যবহার করে মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করছেন শত শত সংগ্রহকারী। মো. ইদ্রিস, মো. মুন্না, সোহেল, হাসানসহ এদের কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার আশানুরূপ ডিম দিয়েছে মা মাছ। অনেকেই রেণু ফোটানোর জায়গা সংকুলানের কারণে আর ডিম সংগ্রহ না করেই উঠে পড়েন। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এবার প্রায় ১৪ হাজার কেজি নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে জোয়ারের সময় হালদা নদীর আমতুয়া অংশে কার্পজাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছে। পরবর্তীতে ডিমগুলো হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যারা প্রথম দিকে ডিম সংগ্রহ করতে নদীতে ছিল তারা অধিক ডিম সংগ্রহ করেছিল। ডিম সংগ্রহকারীরা গড়ে ২ থেকে ২.৫ বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছে। কাঙ্ক্ষিত ডিম সংগ্রহ করতে পেরে ডিম সংগ্রহকারীরা ভীষণ আনন্দিত। বর্তমানে ডিম সংগ্রহকারীরা হ্যাচারি ও মাটির কুয়ায় ডিম ফোটানো কাজে ব্যস্ত।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার অমাবস্যা তিথিতে (৪র্থ জো) বেলা ১১টার দিকে জোয়ারের সময় হালদা নদীর বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে দ্বিতীয় দফায় নমুনা ডিম ছাড়ে কার্পজাতীয় মা মাছ। প্রথম দিকে খুবই সামান্য পরিমাণে নমুনা ডিম পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে জোয়ার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিমের পরিমাণ বাড়তে থাকে। যেহেতু অমাবস্যার জো চলছে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হলেই রাতেই পুরোদমে ডিম ছাড়ার ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দেয়। বাস্তবে হয়েছেও তাই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, গতরাত ২টা থেকে বহুল প্রতীক্ষিত হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছেড়েছে। নদীপাড়ের প্রায় সাড়ে ৫০০ ডিম সংগ্রহকারী ২৫০টি শত নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করেছেন। ভোরের দিকে একটু বৈরী আবহাওয়ায় স্বাভাবিক ডিম সংগ্রহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। এরপর সময়ের সঙ্গে পর্যাপ্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন সংগ্রহকারীরা।
আনন্দের সংবাদ হচ্ছে, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এবার ভালো পরিমাণ ডিম সংগৃহীত হয়েছে। মদুনা ঘাট ছায়ার চর থেকে, রামদাস মুন্সীরহাট, আমতুয়া, নাপিতার গোনা, আজিমের ঘাট, মাচুয়া গোনা, কাগতিয়া, আইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহী ঘাট, নোয়াহাট, কেরামতালির বাক এবং অঙ্কুরিগোনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করতে পেরে অনেক ডিম সংগ্রহকারী খুবই খুশি। অনেকে প্রতি নৌকায় ৪-৫ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। এখন নদীর পাড়ে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারি এবং মাটির কুয়াগুলোতে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিমের পরিস্ফুটনে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে।
ইতোমধ্যে সরকার সাতটি বিভাগের আটটি নদীকে শতভাগ দখল ও দূষণমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের হালদা নদী অন্যতম।