× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চার সীমান্ত দিয়ে আরও ৭৮ জনকে পুশইন বিএসএফের

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৫ ২১:৩২ পিএম

চার সীমান্ত দিয়ে আরও ৭৮ জনকে পুশইন বিএসএফের

দেশের চার জেলাÑ ফেনী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ আরও ৭৮ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। শুক্রবার (৩০ মে) তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।

সীমান্ত এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখে তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটকদের বেশিরভাগই কুড়িগ্রামের বাসিন্দা এবং কাজের খোঁজে ভারতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে ছয়জন ভারতীয় নাগরিককে আটক করেছে। গত বুধবারে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পুশইনে ব্যর্থ হয়ে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ উঠেছে বিএসএফের বিরুদ্ধে।

ফেনীর ছাগলনাইয়ায় শিশুসহ ১৩ জন

শুক্রবার ভোরে ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন বাংলাদেশিকে পুশ ইন করে বিএসএফ। পরে সকাল ৯টার দিকে মথুয়া এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ঘরে তাদের দেখতে পায় বিজিবি। সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা পুশইনের বিষয়টি জানান। তাদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ, ৩ জন নারী ও ৬ শিশু রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, ইটভাটায় কাজের জন্য বিভিন্ন সময়ে ভারতে গিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে তাদের চোখ ও হাত বেঁধে সীমান্ত এলাকায় এনে পরে বাঁধন খুলে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। রাতের অন্ধকার ও বৈরী আবহাওয়ায় তারা পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন।

তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফেনী ৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। তিনি জানান, বিএসএফের এ ধরনের আচরণের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

এর আগে গত ২২ মে জেলার ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে ৩৯ জনকে পুশইন করে বিএসএফ।

মৌলভীবাজারে পুশইন ২৯ জন

মৌলভীবাজারের জুড়ি ও কমলগঞ্জ উপজেলার তিনটি সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার সকালে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ২৯ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করে বিএসএফ। জুড়ির রাজকি সীমান্ত দিয়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ১০ জনকে এবং কমলগঞ্জের বাগিছড়া ও চাম্পাপাড়া সীমান্ত দিয়ে আরও ১৯ জনকে পুশইন করা হয়।

তাদের সবাই কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিল তারা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানান বিজিবি ৪৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাকারিয়া। রাজকি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবুল হাশেম ১০ জনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

চুনারুঘাট সীমান্তে ২২ জন

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ডেবরাবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিএসএফ ২২ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করে। শুক্রবার সকালে বিজিবির টহল দল তাদের আটক করে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৮ জন নারী ও ৫ জন শিশু রয়েছে।

তারা সবাই কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা এবং বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ভারতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে বিজিবি। চুনারুঘাট থানায় তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে। বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজিলুর রহমান জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, এর মাত্র তিন দিন আগে একই উপজেলার কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়েও ১৯ জনকে পুশইন করেছিল বিএসএফ।

খাগড়াছড়িতে চার দফায় ১৩২ জনকে পুশইন

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আচালং সীমান্ত দিয়ে ১৪ জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে বিএসএফ। শুক্রবার ভোরে জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নের আচালং সীমান্ত দিয়ে তাদের ঠেলে পাানো হয়।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘ভোরের দিকে বৃষ্টির মধ্যে বিএসএফ ১৪ জনকে জোরপূর্বক পুশইন করে। তারা ভারতের হরিয়ানা রাজ্য থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। পরে আচালং সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও জানান, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের হেফাজতে নেয়। বর্তমানে তারা বিজিবির হেফাজতে রয়েছে এবং তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে। 

ইতোমধ্যে চলতি মে মাসে খাগড়াছড়ির রামগড়, মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ির সীমান্ত দিয়ে আরও তিন দফায় ১১৮ জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ জেলায় চার দফায় ১৩২ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা।

লালমনিরহাটে ৬ ভারতীয় নাগরিক আটক

লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে ৬ ভারতীয় নাগরিককে আটক করে বিজিবি। তারা ভারতের আসাম রাজ্যের বাসিন্দা এবং তাদের আইডি কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে বলে দাবি করেছেন। গত বৃহস্পতিবার হাতীবান্ধা দইখাওয়া বিওপি সংলগ্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাদের ঠেলে পাঠানো হয়।

আটকরা হলেন, নিজাম আহমেদ (৪৮), আব্দুল গফুর (৫৬), কিসমত আলী (৬৩), হাফিজা বেগম (৩৫), রহমত আলী (৩৫), নুরেজা বেগম (৪৫)। ভারত থেকে আসা কিসমত আলী বলেন, ‘আমি আসামের নাগরিক। ঘর পেয়েছি, আই কার্ড আছে, তবুও আমাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ 

তিস্তা ব্যাটালিয়ন-২ (৬১ বিজিবি) এর বুড়িমারী ক্যাম্প কমান্ডার আবুল কাসেম বলেন, বিজিবি তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে।

এদিকে ফেনীর পরশুরামের বল্লামুখা সীমান্তে নোম্যান্সল্যান্ডের ভেতরে খাল খননের চেষ্টা করে পিছু হটেছে বিএসএফ। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্ব রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে বল্লামুখার বেড়িবাঁধ থেকে প্রায় ১০০ গজ উত্তরে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দা মমতাজ মিয়া জানান, ঝড়বৃষ্টির মধ্যে এক্সকাভেটর ও যন্ত্রপাতি নিয়ে সীমান্তের পিলার থেকে ২০-৩০ গজ ভেতরে খাল খননের চেষ্টা করে ভারতীয়রা। এ সময় বিজিবি এবং স্থানীয়দের বাধায় তারা কাজ বন্ধ করে সরে যায়।

স্থানীয় সাংবাদিক এমএ হাসান বলেন, ভারত পূর্বে খননকৃত একটি খালের কাজ পুনরায় শুরু করতে চাইলেও তা প্রায় ২০ ফুট নোম্যান্সল্যান্ডের মধ্যে পড়ে। বিজিবি বিষয়টি চিহ্নিত করে আপত্তি জানালে ভারতীয়রা সরে যায়। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, সীমান্তে বিজিবি ও স্থানীয়রা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান জানান, ‘ভারত সীমান্তের টিলা কেটে বাংলাদেশের ভেতরে পানি ঢোকানোর চেষ্টা করছিল। বিজিবি ও স্থানীয়রা তা প্রতিহত করেছে। আমরা সতর্ক রয়েছি এবং এ ধরনের কার্যক্রমের অনুমতি দেওয়া হবে না।’

বিজিবি ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশারফ হোসেন বলেন, ‘নোম্যান্সল্যান্ডে কোনো স্থাপনা নির্মাণ আন্তর্জাতিক নিয়মে নিষিদ্ধ। তারা শূন্যরেখা থেকে ভারতের দিকে ১৫০ গজের মধ্যে একটি ড্রেন খনন করতে চাইলে আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। বর্তমানে খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা