কক্সবাজার
কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫ ১৮:৩৭ পিএম
আপডেট : ২৮ মে ২০২৫ ১৮:৪৩ পিএম
বৈরী আবহাওয়া ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে গেছে চলতি মৌসুমের লবণ উৎপাদন কার্যক্রম। ১৭ মে শেষ হয়েছে লবণ উৎপাদন, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ লাখ ১০ হাজার টন। কিন্তু উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টন লবণ। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪৯ টনে। তবে ৬৪ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ লবণ এ বছর উৎপাদন হয়েছে। এর আগে ২০২৩-২৪ সালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে মোট ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৬৯ হাজার ১৯৮ একর জমিতে গত বছরের ৪ নভেম্বর থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছিল। এসব জমির জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ লাখ ১০ হাজার টন। তবে ১৭ মে পর্যন্ত ছয় মাসে মোট ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। ১৮ মে থেকে লবণ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
বর্তমানে উপকূলীয় এলাকার চাষিদের কাছে এ মৌসুমে উৎপাদিত ১৪ লাখ টনের বেশি লবণ মজুদ রয়েছে। প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়, যা প্রতি কেজি সাড়ে ৬ থেকে ৭ টাকার সমান। যদিও বাজারে প্যাকেটজাত লবণের খুচরা মূল্য ৩০ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতি মণ লবণ উৎপাদনের বিপরীতে চাষিদের খরচ প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। জেলায় প্রায় ৪১ হাজার ৩৫৫ জন প্রান্তিক চাষি এবং ১ লাখ শ্রমিকসহ কয়েক লাখ মানুষ লবণ উৎপাদন, পরিবহন ও ব্যবসায় সরাসরি যুক্ত রয়েছেন।
বিসিক কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল জানান, চলতি মৌসুমে মোট ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। যদিও লক্ষ্যমাত্রার থেকে ঘাটতি রয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪৯ টন। তবে এই ঘাটতি মেটাতে লবণ আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ মাঠপর্যায়ে চাষিদের হাতে প্রায় ১৪ লাখ টন লবণ অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে। এতে দেশের চাহিদা আগামী ৭ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত পূরণ সম্ভব হবে। এরপর নভেম্বর বা ডিসেম্বর থেকে পুনরায় লবণ উৎপাদন শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে লবণের দাম কম থাকায় চাষিরা হতাশ হয়েছিলেন, তবে আশা করা যায় বর্ষাকালে দাম আরও বাড়বে।
গত শনিবার বিকালে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল উপকূলে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে সয়লাব লবণের মাঠ। আগেই চাষিরা মাঠে বিছানো পলিথিন তুলে নিয়েছেন। আর গর্তে মজুদ করা লবণ কোনো ধরনের পানি ঢুকেছে কি না তা দেখছেন চাষিরা।
স্থানীয় চাষি নুরুল কবির বলেন, একবার বৃষ্টি হলে টানা ৭-৯ দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকে। এবার এপ্রিল মাসের শেষের দিকে এবং মে মাসে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের কারণে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। যদি বৃষ্টিপাত না হতো আরও আনুমানিক ২০ হাজার টন লবণ উৎপাদন করতে পারতাম।
বিসিক লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন ১৭ মে শেষ হয়েছে। এপ্রিল মাসে আবহাওয়া কিছুটা ভালো থাকলেও খরার কারণে লবণ উৎপাদন কমেছে। এরপর কয়েক দফায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় উৎপাদন আরও ব্যাহত হয়েছে। চাষের জমি এবং চাষি সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন অর্জিত হয়নি কারণ লবণের দাম ছিল নিম্নমুখী। ফলে অনেক চাষি সময়মতো মাঠে নামেননি এবং কেউ কেউ দ্রুতই মাঠ ত্যাগ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে লবণের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় চাষিরা লবণ গর্তে মজুদ করে রেখেছেন। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, মাঠে বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ টন লবণ মজুদ রয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে সম্পূর্ণ জরিপ শেষ হলে দুই-এক দিনের মধ্যে গর্ত, রাস্তার পাশে ও মিলে কতটুকু লবণ মজুদ আছে তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। বর্তমানে মাঠে লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। সামনের দিনগুলোতে লবণের দাম বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।