× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দূষণের দায় নিচ্ছে না কেউ

আবদুল্লাহ আল মারুফ, কুমিল্লা দক্ষিণ

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫ ১০:২২ এএম

আপডেট : ২৮ মে ২০২৫ ১৮:৪৯ পিএম

নানা বর্জ্যে বিষাক্ত হচ্ছে দিশাবন্দ খালের পানি। প্রবা ফটো

নানা বর্জ্যে বিষাক্ত হচ্ছে দিশাবন্দ খালের পানি। প্রবা ফটো

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ অঞ্চল সদর দক্ষিণের কিছু এলাকার মানুষ ভালো নেই। এ এলাকার বাসিন্দাদের ঘরের টিনে জং ধরে। পুকুরে মাছ হয় না। খালের পানি কালো হয় ও পাড়ের গাছ মরে যায়। এসবের জন্য অনেকের ধারণা, সিটি করপোরেশনের পানি দায়ী। অনেকের আবার ধারণা, কুমিল্লা ইপিজেডের বর্জ্যে এমন সমস্যার উদ্ভব। তবে কেউ দূষণের দায় নিচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের সচিব জানিয়েছেন, তার এলাকায় কোনো শিল্পকারখানা নেই। অন্যদিকে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলেছে, অক্ষরে অক্ষরে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মকানুন মেনেই তারা চলছে। দুপক্ষের কথায় কতটুকু সত্য? এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।

জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ অঞ্চল অর্থাৎ কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার কয়েকটি এলাকায় এ দূষণ হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, কুমিল্লা নগরের উনাইশার এলাকায় ইপিজেডের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সীমানা প্রাচীরের নিচ দিয়ে বের হচ্ছে পানি। এরপর পাশের দিশাবন্দ ও কাজীপাড়া খাল হয়ে এসব বিষাক্ত পানি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার মোস্তফাপুরে গিয়ে গুংগাইজুরি খালে পড়ছে। উপজেলার বিজয়পুর, বারপাড়া ইউনিয়ন এলাকা হয়ে লালমাই উপজেলার বাগমারা এলাকায় গিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে মিশছে। 

এই বিশাল এলাকার প্রতিটি খাল-বিল ও নালার মধ্যে গাঢ় কালো রঙের পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি। দুর্গন্ধে খালের পাশ দিয়ে চলাচলও কষ্টকর। স্থানীয়রা জানেন এই পানি ক্ষতিকর। 

এই পানি কি সিটি করপোরেশনের নাকি ইপিজেডের কেউ জানেন না। কারণ দুই পানিই একই ড্রেনে আসে। 

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন খাল দিয়ে অপসারিত স্যুয়ারেজ ও গৃহস্থালির তরল বর্জ্যের কারণে প্রাণী ও মাছ বিলীন হওয়ার পাশাপাশি ফসলি জমি পরিণত হয়েছে পতিত জমিতে, তার প্রমাণ মিলেছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার অন্তত সাতটি পয়েন্টে থেকে নমুনা সংগ্রহের পর সেগুলো ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা শেষে সেই তথ্য জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়। 

জানা যায়, কৃষক সমবায় ঐক্য পরিষদ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীবকে কুমিল্লা ইপিজেডের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) পরিশোধিত তরল বর্জ্য এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন খালগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টের স্যুয়ারেজ ও গৃহস্থালি তরল বর্জ্যের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য নির্দেশ দেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রতিনিধিদল কুমিল্লা এসে ইপিজেড়ের সাধারণ বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) পরিশোধিত তরল বর্জ্য এবং অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নমুনা সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন খালের নানান পয়েন্ট থেকে যেমন রেইসকোর্স, টমসনব্রিজ, ইপিজেড সীমানার বাইরের সিটি করপোরেশনের খাল, ইপিজেড সীমানার ভেতরের খাল, সিইটিপি আউটলেট ও সিটি করপোরেশনের খালের পানির মিশ্রণের পয়েন্ট, রাজাপাড়া এলাকার ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রবাহিত খাল এবং দীশাবন্দ এলাকাসহ মোট সাতটি পয়েন্ট থেকে প্রতিনিধি দলটি পানির নমুনা সংগ্রহ করেছে।

চট্টগ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দ্রবীভূত অক্সিজেন, সাসপেন্ডেড সলিডস, জৈবিক/বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা, রাসায়নিক অক্সিজেনের চাহিদা, বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা, অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন, ফসফেটের মান পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালায় মাছ চাষে ব্যবহার্য ভূপৃষ্ঠস্থ পানিতে নির্গমনের এবং পয়ঃনির্গমনের জন্য নির্ধারিত মান মাত্রার তুলনায় অনেক বেশি পাওয়া গেছে বলে জানান চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালক নাসিম ফারহানা শিরীন। ইতোমধ্যে নমুনা সংগ্রহের গুণগত বিশ্লেষণ ফলাফল কুমিল্লা কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন তিনি।

এই রিপোর্ট অনুযায়ী কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের স্যুয়ারেজ ও গৃহস্থালি বর্জ্যের কারণেই খালগুলোর মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার উপযুক্ত পরিবেশ নেই।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ মামুন বলেন, সিটি করপোরেশনে কোনো কলকারখানা নেই। তাহলে কীভাবে আমাদের পানিতে দূষণ হচ্ছে জানি না। এটি ইপিজেডের পানিতেই হচ্ছে।

কুমিল্লা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের যে নীতিমালা আছে, সেভাবেই আমরা মেনে চলছি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা