আব্দুল মালেক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫ ০১:১২ এএম
ঈশ্বরগঞ্জ ডি.এস. কামিল মাদ্রাসা
আমার জীবনের একটি বিশাল অধ্যায় শেষ হলো। গত সোমবার ছিল আমার প্রিয় বিদ্যাপীঠ, ঈশ্বরগঞ্জ ডি.এস. কামিল মাদ্রাসায় শেষ দিন। সেই দিন, কামিল ভাইভার মাধ্যমে ২১ বছরের দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের শেষ চিহ্নটি টেনে দিলাম।
দীর্ঘদিন একসাথে পথচলা শেষে আজ বিদায় নিতে হবে—এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না। কারও মুখে স্মৃতির হাসি, কারও চোখে চুপচাপ অনুভূতির ছায়া। সময় যে কত দ্রুত চলে যায়, তা সত্যিই বোঝা যায় না। কখনো ভাবিনি, বিদায়ের মুহূর্তটা এত কঠিন হবে।
মাদ্রাসায় কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি স্মৃতি আজীবনের জন্য মনের গভীরে গেঁথে থাকবে। শিক্ষকরা সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,বিদায় মানে শেষ নয়; এটি নতুন পথচলার সূচনা। এই কথাগুলো যেন আমার মনের ভার কিছুটা হালকা করে দিল।
বিদায়ের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। শুধু এটুকু জানি, মাদ্রাসা আমার শেকড়—এই স্থান থেকেই আমি বেড়ে উঠেছি, শিখেছি, গড়ে উঠেছি। এই বন্ধন কখনো ছিন্ন হবে না।
আমার শিক্ষাজীবনের এই মুহূর্তটি শুধুই একটি বিদায় নয়—এটি একটি অনুভূতি, একটি স্মৃতি, একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি, এবং নতুন সম্ভাবনার সূচনা। যখন প্রথমবার এই প্রতিষ্ঠানে পা রাখি, আমার মনে ছিল নানা প্রশ্ন, কৌতূহল, স্বপ্ন আর আশা। সেই নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু, নতুন শিক্ষক—সবকিছুই ছিল অজানার মতো এক রঙিন জগত।
ছোট্ট একটি শিশু হিসেবে আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল, হাতে নতুন বই, মনে নতুন আশা। শিক্ষকরা ছিলেন আমার আলোর দিশারী। তারা শুধু পাঠ্যপুস্তক শেখাননি, বরং শিখিয়েছেন জীবনের মূলনীতি, আদর্শ আর মূল্যবোধ।
এই প্রতিষ্ঠানেই গড়ে উঠেছে বন্ধুত্বের সেই বন্ধন, যা আজ আমার জীবনের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ। আমরা একসাথে পড়েছি, খেলেছি, হেসেছি, কেঁদেছি, স্বপ্ন দেখেছি। সেই দিনগুলোর প্রতিচ্ছবি আজও চোখে ভাসে—যেন সেগুলোই জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল সময়।
আজ বিদায়ের প্রহরে সময় থমকে গেছে বলে মনে হয়। চোখে জল, কিন্তু মনে অদ্ভুত এক মিশ্র অনুভূতি—একদিকে বিচ্ছেদ বেদনা, অন্যদিকে নতুন যাত্রার উত্তেজনা। আমি জানি, এই বিদায় আমার জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
এখন সামনে পা বাড়াতে হবে নতুন দিগন্তের পথে। এই মাদ্রাসা আমাকে যে শিক্ষা ও আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, তা আমার শক্তি হয়ে থাকবে। নতুন পথচলায় অসংখ্য চ্যালেঞ্জ আসবে, কিন্তু আমি প্রস্তুত। আত্মবিশ্বাস আর সাহস আমার সাথী।
যখন তুমি এসেছিলে ভবে,
কেঁদে ছিলে তুমি, হেসেছিল সবে।
এমন জীবন তুমি করিবে গঠন,
মরনে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভূবন।
শিক্ষকদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞতা রইল। তারা আমার গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তাদের শিক্ষা, ভালোবাসা ও সাহচর্য আমার প্রতিটি পদক্ষেপে পথ দেখাবে। আমি কখনো তাদের ভুলব না।
সবশেষে বলব, বিদায় মানে শেষ নয়; বরং এটি নতুন শুরুর নাম। আমি প্রস্তুত নতুন জীবন, নতুন অভিজ্ঞতা এবং নতুন সম্পর্কের জন্য।
প্রিয় ঈশ্বরগঞ্জ ডি.এস. কামিল মাদ্রাসা, তুমি থাকবে আমার হৃদয়ের গভীরে, স্মৃতির পাতায় চির উজ্জ্বল হয়ে।