মহেশখালী (কক্সবাজার) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৫ ২১:২৮ পিএম
গ্রেপ্তারকৃত ফরিদুল আলম। প্রবা ফটো
আওয়ামী শাসনামলে মহেশখালীর রাজনৈতিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফরিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করেছে মহেশখালী থানা পুলিশ।
তবে হাসকে হত্যার হুমকির কারণে নয়, নিয়মিত মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহেশখালী থানার ওসি (তদন্ত) প্রতুল কুমার শীল। দেশি-বিদেশি নানা মহলে আলোড়ন তোলে ফরিদুলের এই বক্তব্য। ক্ষমতার চূড়ায় থাকা অবস্থায় এমন হুমকি তার রাজনৈতিক চরিত্রের ভয়ংকর রূপ উন্মোচন করেছে বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
শুক্রবার (২৩ মে) রাতে মহেশখালী থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অভিযান চালানো হয়। এতে হোয়ানক এলাকা থেকে আ.লীগ নেতা ফরিদুল আলম, মিজ্জির পাড়া থেকে আহমুদুর রহমান, শ্রমিক লীগ নেতা মিজানুর রহমান ও মাতারবাড়ীর তিতামাঝি পাড়া থেকে মুহাম্মদ সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন মহেশখালী থানার একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা। পুলিশের দাবি, তাদের সবাইকে নিয়মিত মামলার ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর পরদিন সকালে চার আ.লীগ নেতাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদুল আলমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতার অপব্যবহার, দখলবাজি, প্রতিপক্ষ দমনে পুলিশের অপব্যবহার ও ঠিকাদারি সিন্ডিকেট পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, তিনি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দুর্নীতির বিস্তার ঘটিয়েছেন এবং একাধিকবার সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি দখল করেছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে থানায় মামলার তদন্ত প্রভাবিত করা, আদালতে প্রভাব বিস্তার এবং সরকারি টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ছিল তার রুটিন কার্যক্রম। কিন্তু এসব বিষয়ে কখনও প্রশাসনিকভাবে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সমাবেশে ফরিদুল আলম রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কী একটা পাতিহাঁস আসছে। পিটার হাস বদমাইশ। সে বিএনপির হয়ে যে অসভ্য কাজকারবারগুলো বাংলাদেশে করছে, তাকে পেলে জবাই করে মানুষকে খাওয়াইতাম।’ তার এমন বক্তব্যের সময় নেতাকর্মীরা হাততালি দিয়ে উল্লাস করছিলেন।
বক্তব্যের ভিডিওটি ওই বছরের ১৫ নভেম্বর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানান, বক্তব্যটি প্রচারের আগে ফরিদুল আলমের পক্ষ থেকে একাধিক সাংবাদিককে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তবে ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পরপরই তা সরকারের নীতিনির্ধারকদের নজরে আসে। এরপর গোয়েন্দা সংস্থার কাছে থেকে মাঠপর্যায়ে ফরিদুলের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমও প্রতিবেদন প্রচার করে। শেষমেশ প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।