মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৫ ০৯:১৬ এএম
রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করণী ইউনিয়নের গোলাগঞ্জ বাজার এলাকায় কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত খামারিরা
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন রংপুরের খামারিরা। কোরবানির জন্য দেশি-বিদেশি, শংকরজাতের গরু, ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত করেছেন তারা। পশু মোটাতাজাকরণে নিচ্ছেন বাড়তি যত্ন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দপ্তরের নির্দেশিত উপায়ে মোটাতাজাকরণ করায় কোরবানির পশুর মাংস নিরাপদ। এ বছর রংপুর জেলায় চাহিদা পূরণ করে ১ লাখ ৩৮ হাজার কোরবানির পশু থাকবে উদ্বৃত্ত।
সরেজমিন দেখা যায়, রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করণী ইউনিয়নের গোলাগঞ্জ বাজার এলাকায় দুই একর জমির ওপর শিক্ষক এরশাদুল হক রাসেল তার বড় ভাই প্রবাসী রুহুল আমিন ও এনামুল হক মিলে তিন বছর আগে গরুর খামার গড়ে তোলেন। কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে প্রতি বছর কোরবানিযোগ্য গরু প্রস্তুত করেন রাসেল।
গত ঈদে ৩০টি গরু বিক্রি করলেও এ বছর দেশি, ফ্রিজিয়ান, শাহীওয়ালসহ শংকরজাতের ৫০টি গরু কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিদিন গরুর খামারে নিজেদের চাষ করা নেপিয়ার ঘাস, ভুট্টা, খড়, ভুসি খাওয়াচ্ছেন কর্মচারীরা। সেই সঙ্গে গরুর ঘর পরিষ্কার রাখা, গরুকে গোসল করানোসহ বাড়িতে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসায় প্রতিদিনই খামারে গরু কিনতে আসছেন ক্রেতারা। ইতোমধ্যে ৬টি গরু বিক্রিও করেছেন খামারি রাসেল। তিনি বলেন, ‘আমার খামারে ৫৫০ কেজি থেকে ৬শ কেজি পর্যন্ত ওজনের গরু রয়েছে। গত বছর ভালো সাড়া পাওয়ায় এ বছর বেশি গরু প্রস্তুত করেছি। প্রতিদিনই ক্রেতারা খামারে আসছে। আমরা সাড়ে ৪শ টাকা কেজি দরে লাইভ ওয়েটের মাধ্যমে গরু বিক্রি করছি। ক্রেতারা দাঁড়িয়ে থেকে ওজন দেখে গরু কিনে নিয়ে যায়। এতে করে হাটের মতো প্রতারিত হওয়া ও হয়রানির সুযোগ নেই।’
খামারি রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের খামারে কোরবানির পশুগুলো নিরাপদ। মোটাতাজাকরণে কোনো ধরনের হরমোন কিংবা মেডিসিন ব্যবহার করা হয়নি। যারা বিগত দিনে আমার কাছ থেকে কোরবানির গরু কিনেছেন, তারা এবারও বুকিং দিয়েছেন। আমাদের খামারে দেড় লাখ থেকে তিন লাখ টাকা দামের কোরবানির গরু আছে। ক্রেতাদের সামর্থ্যের কথা চিন্তা করে কিছু দেশীয় গরুও রেখেছি।’
নগরীর সাতমাথা কলাবাড়ি এলাকার ডেইরি খামারি মনসুর আলী এ বছর ফ্রিজিয়ান জাতের তিনটি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। নিজেদের আবাদ করা ঘাস, ভুট্টা, ভুসি খাইয়ে গরু মোটাতাজা করছেন।
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু দেশে আসতে শুরু করেছে। এটি হলে আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে যাব। সরকারকে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ করতে হবে। বর্তমানে বাজারে কোরবানির পশুর যে মূল্য রয়েছে তা স্থিতিশীল ও সন্তোষজনক। এই বাজার কমে গেলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। আমি আশা করছি প্রতিটি গরু দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা করে বিক্রি করতে পারব।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর রংপুর জেলা কার্যালয়ের তথ্যমতে, রংপুর জেলায় ৫২ হাজার ৬৫১টি খামারে ২৫ লাখ পশু রয়েছে। এর মধ্যে গরু রয়েছে ১৩ লাখ, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ১২ লাখ। এ বছর কোরবানির জন্য খামারিরা ৩ লাখ ৬৩ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে রংপুর জেলার ৮ উপজেলায় চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার পশু। উদ্বৃত্ত ১ লাখ ৩৮ হাজার পশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছে খামারিরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর রংপুর জেলা কর্মকর্তা ডা. আবু ছাঈদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের চাহিদার চেয়ে বেশি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক খামারিরা গরু মোটাতাজাকরণ করেছে। এতে করে কোরবানির পশুর মাংস নিরাপদ। এ বছর রংপুর জেলার ৬১টি স্থায়ী ও অর্ধশত অস্থায়ী হাটে কোরবানির পশু বিক্রি হবে। প্রতিটি হাটে গরু অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ৪১টি ভেটেরিনারি মোবাইল টিম কাজ করবে। এ ছাড়া রংপুরের উদ্বৃত্ত পশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের সময় সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ ও ভারতীয় গরু আমদানি রোধে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি খামারিরা কোরবানির পশুর সঠিক দামই পাবে।