রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৫ ০৯:০৮ এএম
আপডেট : ২৪ মে ২০২৫ ১৬:০২ পিএম
চোখ জুড়ানো দৃশ্য। সবুজ ধানক্ষেতের বুক চিরে বয়ে গেছে রেলপথ। তারই দুই ধারে কৃষক বিছিয়ে রেখেছেন রাশি রাশি মরিচ। প্রবা ফটো
উত্তরের কৃষিপ্রধান জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষকদের কাছে মরিচ যেন সোনার ফসল। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর জেলার পাঁচটি উপজেলায় মরিচের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। বাজারে চাহিদার পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ায় মরিচ চাষে আগ্রহ বাড়ছে এ জেলার কৃষকদের। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার হাট বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে কাঁচা ও পাকা মরিচ। ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে ফুটেছে হাসি।
ঠাকুরগাঁও জেলার ভাউলার হাট, রুহিয়া, শীবগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, গড়েয়া ও লাহিড়ি হাটের বাজারগুলোতে এখন জমে উঠেছে কাঁচা ও শুকনো মরিচের কেনাবেচা। রুহিয়া থেকে পীরগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইনের পাশজুড়ে মরিচ শুকানোর দৃশ্য যেন চিরচেনা হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন জেলা বা উপজেলার বিভিন্ন এলাকারর মরিচ চাষিরা এখানে আসছে মরিচ শুকাতে।
রুহিয়ার কৃষক বেলায়েত হোসেন বলেন, এবার আলুতে অনেক লস হয়েছে কিন্তু মরিচে দাম ভালো। কাঁচা অবস্থায় মরিচের দাম কম থাকে, শুকিয়ে বিক্রি করলে দাম দ্বিগুণ হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রুহিয়া রেললাইনের পাশে ট্রাক নিয়ে মরিচ কিনতে আসেন ব্যবসায়ীরা। সে সময় স্টেশন এলাকা কর্মচঞ্চল থাকে।
শীবগঞ্জের কৃষক রাজু ইসলাম বলেন, এক একর জমিতে মরিচ চাষ করছি। আশা করছি ২৫ মণ শুকনো মরিচ হবে। বর্তমান বাজারমূল্য ভালো। প্রতি মণ মরিচ প্রায় ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘায় চাষে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে বিঘাপ্রতি ভালো লাভ থাকবে।
সালন্দর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল বাতেন বলেন, এবার মরিচে তিনগুণ লাভ হবে, গতবার লস হয়েছে। আমার এক একর জমিতে মরিচ চাষে সব মিলে খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। এক একর জমিত মরিচ হবে ২০ মণ। এবার মরিচের দাম নিয়ে অনেক খুশি।
এ ছাড়া সালন্দর, খালপাড়া, গড়েয়ার, ভাউলারহাটসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরাও মরিচ চাষে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ব্যবসায়ীরাও জানাচ্ছেন, এখানকার মরিচের গুণগত মান, রঙ এবং ঝাঁজ থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এর চাহিদা বেশি।
ব্যবসায়ী বরকত উল্লাহ দুলু বলেন, রুহিয়া রেলস্টেশন এলাকা থেকে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মরিচ কেনাবেচা হয়। এলাকার ৭০ ভাগ কৃষকই মরিচ চাষের সঙ্গে জড়িত।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচটি উপজেলায় মোট ১ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে দেশি জাতসহ বাঁশ গাইয়া, জিরা, মল্লিকা, বিন্দু, হট মাস্টারসহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের মরিচের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩২২ হেক্টরের ফসল ইতোমধ্যে কাটা শেষ। গড়ে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ১.৯২ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের যাবতীয় পরামর্শ ও সেবা প্রদান করা হয়েছে। এ বছর মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও জলবায়ু মরিচ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানকার মরিচের রঙ গাঢ়, ঝাঁজ বেশি বাজারে দারুণ কদর পাচ্ছে। এ বছর দাম ভালো, চাষিরাও খুশি।