ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫ ১৭:৪০ পিএম
আপডেট : ২২ মে ২০২৫ ১৭:৪২ পিএম
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রস্তুত রয়েছে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। এ বছর চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ পশু লালন-পালন হয়েছে। এ কারণে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে খামারিদের মনে শঙ্কা কাজ করছে। এখন খামারিরা গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় পশু বড় করে তোলায় খরচ বেড়েছে। ফলে লাভের মুখ কতটা দেখা যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
গত এক বছরে ছোট-বড় শতাধিক খামার উঠে গেছে। এ বছরও যদি বিদেশি গরু দেশে ঢুকে, তাহলে খামারিদের পথে বসতে হবে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ছোট-বড় প্রায় দুই হাজার খামার। এগুলোয় কোরবানি সামনে রেখে পশু লালন-পালন করা হচ্ছে। দেশীয় কায়দায় এসব পশু মোটাতাজা করা হচ্ছে। কোরবানির হাটে তুললে যাতে ক্রেতাদের নজর পড়ে, সেভাবে পরিচর্যা করা হচ্ছে।
খামারি বলেন, ঈদের আরও বেশ কিছুদিন বাকি। তবে দেখতে দেখতে ঈদ চলে আসবে। ফলে পশুগুলোকে বাড়তি যত্ন নেওয়া হচ্ছে। একটুও যাতে ত্রুটি না থাকে তার দিকে নজর রয়েছে। তারা বলেন, সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। খাবার তালিকায় আছেÑ পাকচং ঘাস, কুড়া, ভুসি, খৈল, খড় ও ভাতের মাড়।
আগামী সপ্তাহ থেকে ভৈরবের বিভিন্ন কোরবানির পশু হাটে এসব পশু তোলা হবে। ভৈরবে বিক্রি না হলে আশপাশের জেলা ও উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হবে বিক্রির জন্য। এদিকে দাম নিয়ে শঙ্কা থাকায় গরুর খামারিরা বলেন, গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে বাজারে এবার পশুর দাম কিছুটা বেশি হবে বলেই মনে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মওলা এগ্রো ফার্ম মালিক জুনায়েদ মিয়া বলেন, আমাদের খামারে ৫১টি গরু আছে। ৭ বছর ধরে এই ব্যবসায় তিনি জড়িত। গত বছরের তুলনায় ভৈরবে এ বছর গরু পালন বেড়েছে। গো-খাদ্যের দাম চড়া থাকায় আশানুরূপ দাম পাওয়া নিয়ে গভীর শঙ্কায় ভুগছেন বেশিরভাগ খামারি। হাতে আর সময় নেই, তাই গরুর বাড়তি পরিচর্যা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের খামারে দেড় লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা দামের গরু আছে। খামার থেকেই অনেকে গরু কিনছেন। কেউ কেনার পরই নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ আবার ঈদের দিন নেবেন বলে রেখে যাচ্ছেন।
গোছামারা গ্রামের কুদ্দস মিয়া বলেন, ‘আমার ৫টি গরু আছে। তবে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছি তিনটি। ৭ মাস ধরে লালন-পালন করছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা এসে দেখে যাচ্ছেন। আশানুরূপ দাম পেলে বিক্রি করে দেব। যদি সঠিক দাম পাই, তাহলে বিভিন্ন এনজিও থেকে তোলা টাকা শোধ করে দেবে। সেই সঙ্গে ৫টি বাছুর কেনার পরিকল্পনা আছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর গো-খাদ্যের দাম বেশি। ঈদের কারণে দাম ঊর্ধ্বমুখী।’
খামারি জামাল মিয়া, ফজলু মিয়া, অতুল মিয়া, আক্তার মিয়া বলেন, ‘গরুর খাবারের দাম বাড়ায় ন্যায্য দাম পাব কি না, দুশ্চিন্তায় আছি। গত বছর তেমন একটা লাভ হয়নি। এবার কী হবে ঘোল সন্দেহ রয়েছে।
ভৈরব বস এগ্রো ফার্ম মালিক আরাফাত বলেন, ‘কোরবানি উপলক্ষে প্রস্তুত হওয়া পশুর দাম কিছুটা হলেও বেশি থাকে। বাড়তি মুনাফার আশায় কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য অনেকে গরু, ছাগল, মহিষ পালন করেন। গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় কোরবানির হাটে অনেকেই অল্প লাভেই গরু বিক্রি করতে পারেন। হাটে বড় গরুর তুলনায় মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদাই বেশি থাকে। বড় গরুর ক্রেতা কম। মাঝারি ও ছোট গরুর ক্রেতা বেশি। এসব গরু বিক্রি করে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখা যায়। যদি বিদেশি গরু দেশে ঢুকে, তাহলে খামারিরা চরম বিপর্যয়ে পড়বেন।
উপজেলার আগানগর গ্রামের কৃষক আশাদ মিয়া বলেন, এবার শাহীওয়াল, সিন্ধি ও দেশি প্রায় ১৫টি গরু কোরবানির হাটে তোলার জন্য তৈরি করছেন। দেশীয় পদ্ধতিতে তিনি গরু পালন করেছেন। তিনি বিদেশি গরু দেশে ঢুকে কি না, তা নিয়ে ভয়ে আছেন। পৌর শহরের কমলপুর নিউটাউন এলাকার খামারি সাজ্জাতুল ইসলাম সিয়াম বলেন, প্রায় ৩৬টি গরু ছিল খামারে। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। গো-খাদ্যের দাম অতিরিক্তি হওয়ায় সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে চরম আশঙ্কায় আছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আজহার উল আলম জানান, কোরবানি উপলক্ষে স্টেরয়েড ও রাসায়নিকমুক্ত গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। খামারি ও কৃষকদের সাতটি চিকিৎসা টিম বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। কেউ যাতে অসাধু উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ করতে না পারে, সেদিকে নজরদারি করা হচ্ছে।