কুষ্টিয়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ২০:০২ পিএম
আপডেট : ২১ মে ২০২৫ ২০:২৫ পিএম
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে প্রায় ঐতিহ্যবাহী গাজী, কালু, চম্পাবতীর মেলা বসানো নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ মে) সন্ধ্যায় উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা চাপাইগাছি বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
এতে দুপক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। জামায়াত সমর্থকদের বিরুদ্ধে মেলার দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
সংঘর্ষে জামায়াত পক্ষের আহতরা হলেনÑ জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও মহেন্দ্রপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান, জামায়াতের কর্মী কুদ্দুস প্রামাণিক, শহিদুলের ছেলে তুহিন হোসেন, আক্কাস আলীর ছেলে জিহাদ হোসেন, সুকচাদের ছেলে জামাত আলী, জালালের ছেলে ইউনুস আলী। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিএনপির আহতরা হলেনÑ খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান, বাঁখই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক টিপু সুলতান, গফুর শেখের ছেলে সুকুর শেখ, আজিজলের ছেলে শরীফ, আসাকুর রহমান। তারা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড়শ বছর ধরে হোগলা চাপাইগাছি বাজারে গাজী-কালু-চম্পাবতী মেলার আয়োজন করে আসছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও জুয়া খেলার অভিযোগ তুলে মেলা বন্ধের দাবি তোলেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
তবে প্রশাসনের অনুমতি না মিললেও বিএনপির সমর্থকরা মেলা বসানোর চেষ্টা করেন। এ নিয়ে মঙ্গলবার বিকাল থেকে এলাকায় দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে সন্ধ্যার দিকে দুপক্ষের মধ্যে পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্র হাঁসুয়া, রামদা, লাঠিসোটা নিয়ে মেলার অন্তত ৩০টি দোকানে হামলা, ভাঙচুর লুটপাট চালিয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের কয়েকটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, কয়েকশ জামায়াত নেতাকর্মীর হাতে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। তাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতেও দেখা যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও বাজারের কলা ব্যবসায়ী মফি শেখের ছেলে নাদের শেখ বলেন, ‘শত শত বছর ধরে মেলা হয়ে আসছে। আজ দেখলাম দুপক্ষের দাবড়াদাবড়ি। জামায়াতের লোক বেশি ছিল। তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল।’
মেলার দোকানি পাবনার চাটমোহরের আরজ আলী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আসরের পর থেকে জামায়াত-শিবিরের লোকজন বারবার উঠে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন। পরে সন্ধ্যার একটু আগে কয়েকশ টুপি পরা লোক রামদা, হাঁসুয়া, লাঠিসোটা নিয়ে দোকানে হামলা চালায়। ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম। পরে এসে দেখি মালামাল কিছুই নেই। প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন বলেন, ‘ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জামায়াতের নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে গেলে মেলা কমিটির লোকজন হামলা করেছেন। থানায় মামলা করা হবে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির সমর্থক ও খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান বলেন, ‘জামায়াতের শত শত লোক আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। বিচারের আশায় থানায় মামলা করব।’
প্রতিবছর এই মেলা হলেও এবার অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, ‘মেলা বসানো নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এখন এলাকার পরিবেশ শান্ত।’