ফেনীর পশুর হাট
আবদুল্লাহ আল মামুন, ফেনী
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫ ১৬:১৯ পিএম
আপডেট : ১৬ মে ২০২৫ ১৬:২৫ পিএম
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জমে উঠছে ফেনীর কোরবানির পশুর বাজার। সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন জেলার খামারি, ব্যাপারী ও সম্ভাব্য ক্রেতারা। একদিকে পশু খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে অবৈধভাবে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশÑ সব মিলিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন স্থানীয় খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছরের মতো এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে। চলতি বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮২ হাজার ৩৩৬টি। বিপরীতে খামারিদের খামারে ও পারিবারিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে ৮৭ হাজার ২৭টি পশুÑ অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে ৪ হাজার ৮৯১টি বেশি। এর মধ্যে ৬৯ হাজার ৩৬০টি গরু, ১ হাজার ৬৬৭টি মহিষ, ১৩ হাজার ২৪৩টি ছাগল ও ৩ হাজার ১৪৭টি ভেড়া রয়েছে।
এর আগে গত বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ৮৭ হাজার ২০০টি। তার মধ্যে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে লালন-পালন করা হয় ৯০ হাজার ২৫০টি গবাদি পশু।
ফুলগাজীর ‘মদিনা অ্যাগ্রো’ খামারের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহিম বলেন, প্রবাস জীবন ছেড়ে ২০২১ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে গরু পালছি। খামারে এখন দুই শতাধিক গরু আছে। গোখাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে, ফলে গরুর দামও কিছুটা বাড়বে। সীমান্ত দিয়ে গরু না ঢুকলে আমরা লাভবান হতে পারব।
পরশুরামের খামারি আবদুল মতিন বলেন, ‘গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় বড় লোকসান হয়েছে। এবার পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। এবার কোরবানির বাজারে বিক্রির জন্য ১৫টি গরু ও ৭টি ছাগল প্রস্তুত করেছেন।
এদিকে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অনেক খামারি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার কিছু এলাকা দিয়ে বছরজুড়েই ভারতীয় গরু আসছে। এতে বাজারে দেশি গরুর দাম পড়ে যায়। সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির দাবি জানান।
বিজিবি সূত্র জানায়, গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে ফেনীর সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২৩টি ভারতীয় গরু আটক করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
বিজিবি ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যাতে অবৈধভাবে গরু ঢুকতে না পারে।
পাশাপাশি খামারিরা পশু বিক্রিতে নিচ্ছেন নতুন কৌশল। মোহাম্মদ আরাফাত নামে এক খামারি বলেন, ইতোমধ্যে খামারে এসে ক্রেতারা গরু কেনা শুরু করেছে। অনেকে আগে এসেই পশু কিনে রাখছে, যা কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত খামারে রাখতে পারবেন। এ ছাড়া ক্রেতা চাইলে খামারে এসে লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে গরুর ওজন মেপেও গরু কিনতে পারবেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হক বলেন, জেলায় অন্তত ৫ হাজার তালিকাভুক্ত খামারির বাইরেও বহু মানুষ গরু লালন-পালন করছেন। পশুর সংকট হবে না। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষ্যে পেশাদার ও মৌসুমি কসাইদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি চামড়া সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে অবহিতকরণ কার্যক্রম করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক গরু আমদানি বন্ধ রাখলে স্থানীয় খামারিরা লাভবান হবেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।