মেহেদী হাসান রনি, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫ ১৬:১৬ পিএম
আপডেট : ১৬ মে ২০২৫ ১৬:২৭ পিএম
নদীবেষ্টিত জেলা রাজবাড়ী। তবে বর্ষা মৌসুম ছাড়া প্রায় সারা বছরই এখানকার নদী-খাল-বিল পানিশূন্য থাকে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করে। বর্তমানে পদ্মা ও গড়াই ছাড়া অন্যান্য নদী ও খালে পানির দেখা নেই। ফলে চাষাবাদে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
যার কারণে একদিকে যেমন নদী ও খাল-বিলে কমেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ, তেমনি অন্যদিকে উন্মুক্ত জলাশয়ের পানির সুবিধা না পেয়ে কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। এ অবস্থায় নদী ও খালের সঙ্গে সংযুক্ত শাখা নদী ও খালে পানির প্রবাহ নিশ্চিতকরণে পুনঃখননের পাশাপাশি পদ্মা নদীর ওপর গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি সাধারণ মানুষের।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা, গড়াই, হড়াই, চন্দনা, চত্রা, মরাকুমার, সিরাজপুর, হাজরাখালীসহ ছোট-বড় ১০টির বেশি নদী এবং প্রায় ৫০টি খাল বর্ষায় পানি ধারণ করলেও শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশই শুকিয়ে যায়। ফলে শুষ্ক মৌসুমে উন্মুক্ত জলাশয়ের পানির অভাবে ব্যাহত হয় সেচ কাজ। এই সময়ে ভূগর্ভস্থ পানিরও সংকট দেখা দেয়। বিভিন্ন স্থানে টিউবওয়েল ও শ্যালো মেশিনে ঠিকঠাক পানিও ওঠে না। অপরিকল্পিতভাবে নদী ও খাল খনন এবং মূল নদী থেকে শাখা নদী ও খাল-বিলে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দিন দিন এই সমস্যা বড় আকার ধারণ করছে। এদিকে নদীতে পানি ধরে রাখতে জেলার পাংশায় গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, পাবনা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শুষ্ক মৌসুমে নদীসহ উন্মুক্ত জলাশয়ের পানির অভাব দূর হবে।
রাজবাড়ী সদরের মিজানপুরের কৃষক আব্দুস সাত্তার মোল্লা বলেন, পদ্মাসহ বড় বড় নদী থাকলেও শুকনো মৌসুমে আমাদের পানির সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যায়। যার কারণে টিউবওয়েল ও মেশিনে ঠিকভাবে পানি ওঠে না। মেশিনে পানি কম ওঠার কারণে সেচকাজে খরচও বেড়ে যায়। নদী ও খালগুলো ভালোভাবে খনন করে পানি রাখার ব্যবস্থা করলে সেচের জন্য ভালো হতো এবং ফসল ফলাতে সুবিধা হতো।
কালুখালীর কৃষক মজনু বলেন, পানির অভাবে আমরা ফসল ঠিকমতো ফলাতে পারছি না। শ্যালো মেশিনে ঠিকমতো পানি ওঠে না। এখন যে পানি উঠছে তাতে এক লিটার তেলে ৫ শতাংশ জমি ভেজানো যায়। আগে এক লিটার তেলে ১০ শতাংশ জমি সেচ দেওয়া যেত। এভাবে পানি দিয়ে পোষায় না। আর আমাদের কৃষি জমির পাশে খাল থাকলেও সারা বছরই তা শুকিয়ে থাকে। পানি ঠিকমতো না দিতে পারায় সার ডাবল দিতে হয়। যার কারণে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। খালগুলো গভীর ভাবে খনন করে নদীর সঙ্গে যুক্ত করলে পানি পাওয়া যেত।
রাজবাড়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাকারিয়া বলেন, দেশে প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাসে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানে শ্যালো মেশিন ও টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় আমরা সাব-মার্সেবল ও তারা পাম্প ব্যবহার করছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম রাসুল বলেন, নদী-খালে পানি না থাকায় বোরো মৌসুমে গভীর নলকূপ আরও গভীরে বসাতে হয়। এতে ব্যয় বাড়ে এবং সেচ ব্যাহত হয়। নদী-খালের সঙ্গে সংযুক্ত শাখা নদীর মুখে রাবার ড্যাম তৈরি করে মূল নদী থেকে পানি আনা যেতে পারে। কৃষি কাজে নদী-নালা, খাল-বিলের পানির ব্যবহার করতে পারলে খরচ অনেকটা কমে যাবে।
পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, রাজবাড়ীতে পদ্মা-চন্দনাসহ বিভিন্ন নদী প্রবহমান রয়েছে। ভাটির দেশ হিসেবে নদীর পানি ধরে রাখতে রাজবাড়ীর পাংশায় গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্পের সমীক্ষা চলছে। এটি বাস্তবায়ন হলে পদ্মা ও শাখা নদীগুলোতে সারা বছর পানি ধরে রাখা যাবে।