× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দাম বেড়েছে সাদা সোনার

মহেশখালী (কক্সবাজার) সংবাদদাতা

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫ ১৭:০৪ পিএম

মহেশখালীতে লবণ তুলে তা গর্তে ফেলে মজুদ করছেন চাষিরা। প্রবা ফটো

মহেশখালীতে লবণ তুলে তা গর্তে ফেলে মজুদ করছেন চাষিরা। প্রবা ফটো

দীর্ঘদিন ধরেই লবণ চাষিরা লোকসান গুনে এলেও মৌসুমের শেষে দেশের সাদা সোনা খ্যাত লবণের দাম বাড়ছে। সারা মৌসুমে প্রতি বস্তা লবণের (দুই মণ) ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা দাম ছিল। তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে লাফিয়ে প্রতি বস্তা লবণ ৮০০ টাকায় পৌঁছেছে। এখন প্রতি মণ লবণের বাজার দর ৪০০ টাকা।

প্রতি বছরই মৌসুম শেষে এমন দাম বাড়ে, তবে চলতি বছরে দাম বৃদ্ধির হার তুলনামূলক বেশি। মাঠে পড়ে থাকা লবণ হঠাৎ-ই লাভের খাতায় নাম লিখিয়েছে। ফলে নিরাশ চাষিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। ছয় মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম আর ঘাম ঝরিয়ে তিলে তিলে তৈরি করা লবণ ভালো দামে বেচতে পেরে তারা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন।

মহেশখালীর হোয়ানক, কালারমারছড়া, বড় মহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের মাঠে লবণ উত্তোলনের শেষ ধাপ চলছে। বাজারে দাম বাড়ায় অনেক চাষি এখন আগে গর্তে মজুদ রাখা লবণও বেচছেন। কেউ কেউ আশা করছেন দাম আরও বাড়বে। তাই অপেক্ষায় রয়েছেন।

মাঠের গর্তে রাখা লবণ যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনই পুরোনো দেনা পরিশোধে কিছুটা স্বস্তিও মিলেছে। লবণের কাঁচামাল, শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন ব্যয়ের চাপ সইতে না পেরে মৌসুমজুড়ে লবণ চাষিরা হতাশায় ছিলেন। দাম বাড়ায় সেই হতাশা কিছুটা হলেও কাটতে শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, একজন চাষি গড়ে ১২০ শতাংশ জমিতে লবণ চাষ করেন। জমি ইজারা, পলিথিন, পানি, লবণ ক্রিস্টালাইজার, লবণ তোলার যন্ত্র ও শ্রমিক মজুরি মিলিয়ে ব্যয় হয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এতে উৎপাদন হয় প্রায় ৯০০ মণ লবণ। মৌসুমের প্রথম দিকে যখন লবণের দাম ছিল প্রতি মণ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, তখন বিক্রি করে মোট আয় হতো সর্বোচ্চ ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। কিন্তু এখন দাম মণপ্রতি ৪০০ টাকা হওয়ায় আয় হবে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এতে খরচ বাদ দিয়েও ভালো মুনাফা পাওয়া যাবে।

তবে এই লাভ সবাই পাচ্ছেন না। যারা মৌসুমের শুরুতেই লবণ বিক্রি করে দিয়েছেন, তারা এখন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। অনেক চাষি ধারদেনা পরিশোধের জন্য মৌসুমের মাঝপথে লবণ বিক্রি করে দেন। আবার কেউ কেউ কম দামে বিক্রি করে দালালদের কাছে প্রতারিত হয়েছেন।

যারা শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন বা গর্তে লবণ মজুদ রেখেছেন, তারাই লাভবান হচ্ছেন। বাজারে দাম হঠাৎ করেই বাড়বে, তা অনেকেই ভাবতে পারেননি। ফলে দামে স্বস্তি এলেও অনেকের জন্য বয়ে এনেছে হতাশা।

স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রথমত, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মৌসুমজুড়ে দাম কম থাকায় চাষিরা আগেভাগে বিক্রি করতে চাননি, এতে বাজারে সরবরাহ কমেছে। এ ছাড়া পরিবহন সংকট, শিল্পকারখানায় কাঁচামালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পাইকারি পর্যায়ে কিছুটা কারসাজির অভিযোগও রয়েছে।

এদিকে ক্রেতাদের একাংশের অভিযোগ, দাম বাড়ায় বাজারেও প্রভাব পড়ছে। উৎপাদকরা অবশ্য তা স্বীকার করতে রাজি নন।

দামের এই উত্থান চাষিদের জন্য স্বস্তির হলেও, নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, প্রতি বছরই মৌসুম শেষে দাম বাড়ে। অথচ সরকার মৌসুমে কোনো নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা হাতে নেয় না। এতে উৎপাদক দাম পান না। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়ে যায়। তাই মাঠপর্যায়ে বাজার ব্যবস্থাপনা, মজুদ ও সরবরাহে স্বচ্ছতা আনতে হবে। নির্মূল করতে হবে দালাল চক্রকে। এ ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়। দাম বাড়ার এই ক্ষণস্থায়ী স্বস্তি আগামীতে যেন বিপর্যয় ডেকে না আনে তার প্রতি এখনই দৃষ্টি দিতে হবে।

মহেশখালীর বড় মহেশখালী ইউনিয়নের চাষি আবদুল খালেক বলেন, ‘লবণের দাম এমন বেড়েছে, চোখে পানি এসে গেছে। সারা মৌসুমে দুশ্চিন্তায় ছিলাম, এখন কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি।’ একই ইউনিয়নের আরেক চাষি রহিম উল্লাহ বলেন, ‘আমি শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। গর্তে লবণ জমিয়ে রেখেছিলাম। এখন ৮০০ টাকা দরে বেচছি।’

কক্সবাজার বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, ‘চলতি বছরে কেবল মহেশখালীতেই ১৭ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। এর অন্তত ২৫ শতাংশই আসে মহেশখালী দ্বীপ উপজেলা থেকে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা