× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিলের বুকে মাখনার ফুল-ফল, মুগ্ধ প্রকৃতি প্রেমীরা

অরণ্য ইমতিয়াজ, টাঙ্গাইল

প্রকাশ : ১০ মে ২০২৫ ১৭:৪৩ পিএম

আপডেট : ১০ মে ২০২৫ ১৭:৫০ পিএম

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কালিয়ান বিল থেকে মাখনা ফল সংগ্রহ। প্রবা ফটো

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কালিয়ান বিল থেকে মাখনা ফল সংগ্রহ। প্রবা ফটো

বিলের শান্ত জলে ভেসে থাকা কাঁটাযুক্ত সবুজ পাতার মাঝে লাল-সবুজ বর্ণের ছোট ছোট ফুল। পাশে ডিম্বাকৃতির দুর্লভ ফল। চোখ জুড়ানো এই দৃশ্য এখন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কালিয়ান বিলে। বর্ষার শেষে বিলের পানি কমে এলেও সৌন্দর্যে ভাটা পড়েনি এতটুকু। মাখনার ফুল আর ফলের অপার প্রাকৃতিক শোভা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন প্রকৃতি প্রেমীরা। অনেকেই জানেন না, এই সুন্দর জলজ উদ্ভিদ শুধু নয়নসুখই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর।

ঘাটাইলের কালিয়ান বিলের প্রায় ৫ একর জায়গায় প্রাকৃতিকভাবে এই জলজ উদ্ভিদটি বেড়ে উঠেছে। মাখনার পাশাপাশি বিলটিতে রয়েছে প্রচুর পদ্মফুল। এই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিলের পাশে ভিড় জমাচ্ছে দর্শনার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাখনা কাঁটাযুক্ত জলজ উদ্ভিদ; যার শিকড় ও কন্দ পানির নিচে মাটিতে সন্নিবিষ্ট থাকে, পাতা প্রায় গোলাকার, পানির ওপরে ভেসে থাকে। মিঠাপানির জলাধার, উন্মুক্ত জলাভূমি বা বিলে মাখনা জন্মে। আমাজন লিলির পর এর পাতা উদ্ভিদ রাজ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। মাখনার ফুল আকারে শাপলার চেয়ে ছোট। এক সময় হাওর, খাল, বিল ও উন্মুক্ত জলাশয়ে মাখনার দেখা মিললেও বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য। বিল দখল, ভরাট ও  আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার পরও ঘাটাইলের কালিয়ান বিলে দুর্লভ জলজ উদ্ভিদ মাখনা এখনো টিকে আছে।


মাখনার পাতা কাঁটাযুক্ত প্রায় গোলাকার, পানির ওপরে ভেসে থাকে। পাতার উপরের অংশ সবুজ উল্টো পিঠ কিছুটা বেগুনি রংঙের। ফুলগুলো ২ ইঞ্চির মতো লম্বা হয়। ভেতরের অংশ উজ্জ্বল লাল বাইরের দিকে সবুজ ও উজ্জ্বল বেগুনি রংঙের হয়। ফল গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির। প্রতিটি ফলে ২০/৩০ টি বীজ থাকে। ফলের বাইরের অংশও কাঁটাযুক্ত। ভেতরের ফল ছোলা বা মটরের দানার মতো। স্বাদও কাঁচা ছোলার স্বাদের মতো। ফুলের পাপড়ি ঝরে গেলে ফলটি কাপ আকৃতি ধারণ করে। এর ভেতরে ছোট ছোট বিচি। বিচির খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় মিষ্টি স্বাদের মাখনা।

ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দেওপাড়া ইউনিয়নের কালিয়ান বিলে গিয়ে দেখা যায়, বিলের পানি প্রায় শুকিয়ে গেছে। বিলের চারপাশে পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক। বিলের মাঝখানে গিয়ে দেখা গেল কাদাযুক্ত মাটিতে বিলের বিশাল এক অংশ জুড়ে মাখনার ফুল ও ফল রয়েছে। বিলে ধান কাটছিলেন ধলাপাড়া গ্রামের কৃষক মজনু মিয়া। তিনি উৎসাহ নিয়ে কাদাযুক্ত পানিতে নেমে মাখনার পাতা, ফুল ও ফল সংগ্রহ করেন। 

তিনি জানান, শিশু কিশোরসহ তাদের এলাকার অনেকেই এই ফলটির সঙ্গে পরিচিত। বিলে পানি থাকলে নৌকা দিয়ে মাখনা ফল সংগ্রহ করে কাঁচাই খেয়ে থাকেন। তবে তারা ফলটির পুষ্টিগুণ সংগ্রহ পদ্ধতি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি জানেন না।

দর্শনার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যমে ছবিগুলো দেখে আগ্রহ থেকেই আসা। এখানে এসে মনে হচ্ছে যেন এক টুকরো স্বর্গে দাঁড়িয়ে আছি। মাখনার ফুল আর পাতার ছড়ানো সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দেয়। এমন প্রাকৃতিক রত্ন সংরক্ষণ করা খুব দরকার, নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এটা চোখেও দেখবে না।’

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাবিউল ইসলাম বলেন, এবারই প্রথম এই ফল দেখলাম এবং খেলাম। বড়দের কাছে শুনেছি, এটি অত্যন্ত প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং দুর্লভ ফল।

ঘাটাইলের উইজডম ভ্যালির প্রধান শিক্ষক এবং প্রকৃতিপ্রেমী মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, বিরল ফল হচ্ছে মাখনা। টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে কেবল ঘাটাইলের কালিয়ান বিলেই এটি পাওয়া গেছে। পুরান ঢাকার আদি বাসিন্দাদের এক সময় জনপ্রিয় খাবার ছিল মাখনা।

এ বিষয়ে কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারত, চীন, জাপান, বার্মা ও কোরিয়াতে বাণিজ্যিকভাবে মাখনা চাষ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে মাখনার তেমন একটা কদর নেই। তারা আরও জানান, মাখনা ফল শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, বন্ধ্যাত্ব, প্লীহার সমস্যা, যকৃতের অসুখ, কাশি ও ডায়াবেটিসজনিত অসুস্থতার প্রতিকারের জন্য বেশ উপকারী। অধিক পটাশিয়াম এবং কম সোডিয়াম থাকায় যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এ ফলটি। এছাড়া মাখনা ফলে প্রোটিন, স্নেহ পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। মাখনার ফল ও বীজ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবারও তৈরি হয়।

এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিসার দিলশাদ জাহান বলেন, মাখনা অপ্রচলিত একটি ফল। এটি খেয়ে দেখেছি, খেতে বেশ মজা। যেকোনো বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল ফল সংরক্ষণে আমাদের সকলের সচেতন থাকা এবং এগিয়ে আসা উচিত। ঘাটাইলের কালিয়ান বিলে জন্মানো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফলটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা