প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৫ ২১:০২ পিএম
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫ ২১:২৩ পিএম
টেন্ডারবাজি, বদলি, নিয়োগ ও পদায়ন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মগবাজার অফিসে অভিযান পরিচালনা করেছে।
রবিবার (৪ মে) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম এই অভিযান চালায়।
অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান জানান, আমাদের কাছে নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগ, টেন্ডার সংক্রান্ত অভিযোগ, মাল্টিপ্লানের ভবন বোরাক টাওয়ার নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ছাড়াও এখানে বেশ কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বাংলাদেশ সরকারের একটি সহযোগী, মানবিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য বিভিন্ন দেশের অর্থ সহায়তায় মানবিক কাজ পরিচালিত হচ্ছে। অথচ কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্যের অবৈধ কার্যকলাপের ফলে সোসাইটির ভাবমূর্তি ও সুনাম জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এর ফলে দাতা সংস্থাগুলোও মানবিক কাজে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে অর্থ সহায়তা দিতে দ্বিধা বোধ করছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জামালপুর জেলা ইউনিটের কার্যক্রম সচল ও গতিশীল রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আইন ১৯৭৩ এর ক্ষমতাবলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বরাবর ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি এডহক কমিটির খসড়া প্রেরণ করেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম। খসড়ায় সংস্থাটির সাবেক যুবপ্রধান মাহবুবুর রহমান জিলানীকে ভাইস চেয়ারম্যান এবং মো. খায়রুল ইসলাম লিয়নকে সেক্রেটারি হিসেবে সুপারিশ করা হয়। তবে কাউকে কিছু না জানিয়ে মো. খায়রুল ইসলাম লিয়নকে বাদ দিয়ে রিজভী আল জামালী রঞ্জুকে সেক্রেটারি করে উক্ত কমিটি অনুমোদন করার অভিযোগ ওঠেছে সংস্থাটির মহাসচিব ড. কবির মো. আশরাফ আলমের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কবির মো. আশরাফ আলম জানান, কমটি গঠনে জেলা প্রশাসক যেটা পাঠান সেটা সেটা রাখতে হবে নট দ্যাট। এটার এবস্যুলেট ক্ষমতাটা হচ্ছে চেয়ারম্যানের, এটা উনি বোর্ডের মেম্বারদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করেন। আর দুই একটা পরিবর্তন সব জায়গায় হচ্ছে।
মো. খায়রুল ইসলাম লিয়নকে সেক্রেটারি করে একটি খসড়া কমিটির তালিকা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করে কমিটি গঠনের বিষয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম বলেন, এটা উপর থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেখান থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেখানে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
দুদকের অভিযানের জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে কাজ শুরু করেছি দুই মাস যাবৎ। দুদকের যে অভিযোগ তা ২ মাসের আগের ঘটনা। এসব বিষয়ে আমি এতো ভালো জানি না। আমি জয়েন করার সময় সরকার বলে দিয়েছে, যে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। আমি সেইভাবেই কাজ করছি। দুর্নীতির তদন্তে যে কোনো প্রতিষ্ঠান আসলে আমি সর্বাত্মক সহযোগীতা করবো। দুদক যদি কারো বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পায় আমরা তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।
কোনো বিচার বিশ্লেষণ, যাচাই বাছাই না করে শুধু শোনা কথাতে জেলা প্রশাসকের সুপারিশকৃত কাউকে বাদ দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক এমন প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, এই সোসাইটিগুলোর জেলা কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিসি মহোদ্বয়কে। সেখান থেকে একটু যাচাই বাছায় করে আমাদের এখানে পাঠানোর কথা। উনারা যেটা পাঠাচ্ছেন সেটাই আমাদের দেখা উচিৎ বলে আমি মনে করি। সেক্ষেত্রে যদি কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে আমরা কথাবার্তা বলে পরিষ্কার করে ফাইনালি এপ্রুভাল দিচ্ছি।
এ বিষয়ে মো. খায়রুল ইসলাম লিয়ন বলেন, জেলা প্রশাসক কর্তৃক জামালপুর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি অ্যাডহক কমিটি চাওয়া হয়। যা জামালপুর জেলা প্রশাসক সব দলের সাথে সমন্বয় করে একটি ১০ সদস্যের একটি অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন করে রেড ক্রিসেন্ট হেড অফিসে পাঠানো হয়। যেখানে আমাকে সেক্রেটারি প্রস্তাব করে। কিন্তু হেড অফিস থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রেখে শুধু আমাকে অর্থাৎ সেক্রেটারি বাদ দিয়ে কমিটি অনুমোদন করেছে। আমাকে কেন বাদ দেওয়া হয়েছে, আমার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ কিছুই জানানো হয়নি। তাদের একজন মনগড়া লোক দিয়ে কমিটি গঠন করে পাঠিয়ে দেয়। যা আমার উপর সম্পূর্ণ অন্যায় হয়েছে।