× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উন্নয়ন কাগজে-কলমে, বাস্তবে মিল নেই

শফিক সরকার, ময়মনসিংহ

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৩২ এএম

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪২ এএম

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের সরাতি গ্রামের রাস্তার নামে প্রকল্প দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের সরাতি গ্রামের রাস্তার নামে প্রকল্প দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন, নিয়ম মেনে কাজ না করা, শ্রমিক ব্যবহার না করে এক্সকাভেটর ব্যবহার, নিম্নমানের কাজ, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ, গম বিক্রি করে দেওয়ার মতো নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত কাবিখা প্রকল্প। 

এমনকি ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করেও বিল তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় এমন নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়জোড়া গ্রামের একটি মসজিদের জন্য ১২.৪৩০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ হয়। মসজিদের নাম দক্ষিণ বড়জোড়া বাইতুল নূর জামে মসজিদ। এই মসজিদের ঈদগাহ মাঠে মূলত মাটি ভরাটের জন্য এই গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ঈদগাহ মাঠে এক কোদাল মাটিও ফেলা হয়নি। এমনকি মসজিদ সংশ্লিষ্টরাও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

এই প্রকল্পের সভাপতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদ মিয়া মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান ব্যস্ত রয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। মগটুলা ইউনিয়নের তরফ পাছাইল গ্রামে একটি রাস্তার ইটের সলিং বাবদ বরাদ্দ হয় ১০.৭৮৯ মেট্রিক টন গম। রাস্তাটি তরফ পাছাইল গ্রামের শাহজাহান মহল্লাদারের বাড়ি থেকে মালিবাড়ি পর্যন্ত হওয়ার কথা। সরেজমিন দেখা যায়, কাজ প্রায় অর্ধেক বাকি। কিন্তু ইতোমধ্যে দুই কিস্তিতে গম তুলে নিয়েছেন প্রকল্পের সভাপতি, ইউপি সদস্য শরাফ উদ্দিন। শুধু তাই নয়, মাসখানেক আগে তৈরি করা এই রাস্তা ধসে যেতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা বলেন, ‘কোনোভাবেই এই রাস্তা বর্ষাকাল পার হবে না। বর্ষাকালের মধ্যেই পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।’ এত নিম্নমানের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ইসলামপুর রাস্তা থেকে খৈরাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তা পুনর্নির্মাণ বাবদ বরাদ্দ হয় ৭.৮০৯ মেট্রিক টন গম। শ্রমিক দিয়ে কাবিখা প্রকল্পে কাজ করানোর নিয়ম। অথচ কাজ করা হয়েছে এক্সকাভেটর দিয়ে। পুরো রাস্তায় মাটিও ফেলা হয়নি। রাস্তা থেকেই মাটি কেটে মাটি সমান করা হয়েছে অনেক জায়গায়।

সরিষা ইউনিয়নের একটি রাস্তা পুনর্নির্মাণে বরাদ্দ হয় ৪.৫০০ মেট্রিক টন গম। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক পুরো গম তুলে নিয়েছেন। কিন্তু মাঠে কাজ করেছেন অর্ধেকের একটু বেশি। ধান কাটা হয়নি, তাই কাজ করতে পারেননি বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান আব্দুর রাজ্জাক।

আঠারোবাড়ি ইউনিয়নে গ্রহণ করা হয় দুটি প্রকল্প। এর মধ্যে একটি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় আর একটি সম্পূর্ণ ভুয়া। সরাতি ব্রিজ থেকে কাতিয়ার হাওর হাশেমের পুকুর পর্যন্ত একটি রাস্তা পুনর্নির্মাণ করা হয়।

এর জন্য বরাদ্দ হয় ১০.৫১ মেট্রিক টন গম। এই প্রকল্পেও কোনো শ্রমিক ব্যবহার করা হয়নি। বিধিবহির্ভূতভাবে এক্সকাভেটর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে বঞ্চিত হয়েছে এলাকার লোকজন।

সরেজমিন এই রাস্তার কোনো প্রয়োজনীয়তাও চোখে পড়েনি। সারা দিনে তেমন কোনো লোকজন হেঁটেও আসেন না। এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলা তো দূরের কথা অথচ এলাকার লোকদের বঞ্চিত করে এক্সকাভেটর দিয়ে কাজ করে এমন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ঠিকই শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় হরিলুট হয়েছে আঠারোবাড়ির অন্য আরেকটি প্রকল্পে। প্রকল্পটি হলো সরাতি এমদাদুলের পানির পাম্প থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ। 

আঠারোবাড়ির পূর্বের প্রকল্প এবং এই প্রকল্পটি মূলত একই রাস্তা। একই রাস্তা দেখিয়ে দুই প্রকল্প নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৯ মেট্রিক টন গম পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। তবে সোহাগী ইউনিয়নে বারইগ্রামের শাহজাহানের বাড়ি থেকে রবিকুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার কাজ সন্তোষজনক মনে হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘গম বিক্রি অবৈধ হলেও সবাই গম বিক্রি করে টাকা দেয়।’ কাবিখা প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা ইউএনও এরশাদুল আহমেদ বলেন, ‘যদি কোনো কাজ না করা হয়। তাহলে আমি কাজ করার নির্দেশনা দেব। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখে এসেছি। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা