মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম, হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০১ এএম
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১১:২৯ এএম
দিনাজপুরের গাবুড়া বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে টমেটো
দিনাজপুরের গর্ভেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত গাবুড়া বাজার। এই বাজারের টমেটোর কদর দেশজুড়ে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কোটি টাকার টমেটো কেনাবেচা হয় এখানে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই বাজারে টমেটো কিনতে আসেন পাইকাররা। এই বাজারে শ্রমিকসহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের রয়েছে কর্মসংস্থান।
জেলার সদর উপজেলার গর্ভেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত গাবুড়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত এখানে টমেটোর হাট বসে। প্রায় ৫০ বছর ধরে এই বাজারে টমেটোর বাজার বসে। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে এখানে টমেটোর কেনাবেচা। প্রায় এক কিলোমিটার পাকা সড়কের উভয় পাশে অস্থায়ী আড়ত বানানো হয়েছে। এই বাজারে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক পাইকার আসেন টমেটো কিনতে।
ভোর থেকে টমেটো চাষিরা বড় বড় খাঁচায় করে টমেটো বিক্রি করতে আসছেন। টমেটো জাত নামভেদে পাইকার ও কৃষকদের মধ্যে চলে দর কষাকষি। বিপুল প্লাস, প্রভেনসিভ, রোমা ভিএফ, মিন্টু সুপার, আনসাল, রানী এবং শক্তি প্লাস জাতের টমেটো। দরদামে ঠিক হলে নেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পাইকারের আড়তঘরে। সেখানে ক্যারেট ভরানো হচ্ছে। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ক্যারেটগুলো তুলছেন ট্রাক শ্রমিকরা। দৈনিক শতাধিক ট্রাকে গড়ে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার টমেটো কেনাবেচা হয় গাবুড়া বাজারে।
টমেটো চাষি সমশের আলী বলেন, ‘গত বছর ফলন কম ছিল। কিন্তু দাম পাইছি ভালো। এবার ফলন ভালো হয়েছে দামটা কম শুরুতেই ৪০০-৫০০ টাকা মণ পাচ্ছি। দুই বিঘা মাটি বিপুল প্লাস জাতের টমেটো লাগাইছি। দুই বিঘা জমিতে লাখ টাকা খরচ হয়েছে। টমেটোর কেজি ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা। এটা যদি ২০ টাকা থাকত তাহলে বেশ লাভবান হওয়া যেত।’
ঢাকা বদামতলি থেকে আসা পাইকার জামশদ মিয়া বলেন, এবার ঈদের দুদিন পরেই আসছি। দৈনিক ৫-৭টি ট্রাক লোড হচ্ছে। এখানকার টমেটোর একটা সুনাম আছে। চাষিদের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক আছে আমাদের। ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা মণ কিনছি। চাষিরাও দাম কম পাচ্ছে, আমরাও লাভবান হতে পারছি না। আগের তুলনায় খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ট্রাক ভাড়া, শ্রমিকের মজুরি সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। যার ফলে লাভ কম হচ্ছে।
ফরিদপুর থেকে আসা মনজুরুল ইসলাম বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে এই বাজার থেকে টমেটো কিনে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছি। মৌসুমে টানা দুই মাস এই অঞ্চলে থাকি। চাষিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক হয়েছে। দিনাজপুরের টমেটো চাষিদের সঙ্গে পাইকারদের সম্পর্ক বেশ গভীর। প্রতিদিন গাবুর বাজার থেকে শতাধিক ট্রাকে টমেটো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। একটি ট্রাকে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার টমেটো যায়। এতে প্রতিদিন ২ কোটি টাকার বেশি টমেটো বিক্রি হয় গাবুড়া হাটে।
স্থানীয় টমেটো ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, দিনাজপুর গাবুড়া বাজারে টমেটো দেশের সব মার্কেট চলে যায়। এখন বাজারে টমেটোর দাম কম আছে এবং প্রচুর আমদানি হচ্ছে। তবে দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে টমেটোর আমদানি কমে যাবে। পাশাপাশি দামও বাড়বে। তখন ভারত থেকে শুরু হবে টমেটোর আমদানি। এতে করে আমরা কৃষক, ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিতে পড়ব। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ ভারত থেকে যেন এখন টমেটো আমদানি না হয়।
বাজারের ইজারাদার আরিফুল ইসলাম বলেন, এই বাজারে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার টমেটো বেচাবিক্রি হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে বাজারের আশপাশের বাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। হাট ইজারা বাবদ প্রতি মণ টমেটোর জন্য ১৫ টাকা নেওয়া হয়। এর বাইরে কোনো অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। এ কারণে হাটের পরিসর দিন দিন বাড়ছে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, দিনাজপুরে গত অর্থবছরে টমেটোর আবাদ হয়েছিল ৯২৫ হেক্টর জমিতে। এবার সেখানে ১ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি টমেটোর আবাদ হয় জেলার চিরিরবন্দর ও সদর উপজেলায়।