অরণ্য ইমতিয়াজ, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৫৫ এএম
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১১:১২ এএম
টাঙ্গাইল শহরের প্রধান সড়কগুলো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দকলে থাকায় যাটজট যেন নিত্যসঙ্গী। বুধবার শহরের নতুন বাস টার্মিনাল এলাকা
টাঙ্গাইল শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বাড়তির পথেই আছে। এতে শহরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এ ছাড়া অটোরিকশার বেপরোয়া চলাচলে ঘটছে প্রায়ই দুর্ঘটনা। তার পরেও শহরের বিভিন্ন দোকানে অটোরিকশা তৈরি ও বিক্রি থেমে নেই।
অটোচালক, যাত্রী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে শহরের যানজটের পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে অটোর আধিক্য বেড়ে যাওয়া, অদক্ষ চালকের এলোমেলো চলাচল, যেখানে-সেখানে ইউটার্ন, সড়কের পাশে পার্কিং এবং শহরের নতুন বাসটার্মিনালে বাস বের হওয়া ও ভেতরে অবস্থান করানো।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, শহরের নতুন বাস টার্মিনাল থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ দিকে ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। এটি কখনও কখনও টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল গেট হয়ে শামসুল হক তোরণ মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া কুমুদিনী কলেজ মোড়, সুপারি বাগান মোড়, পুরোনো বাসস্ট্যান্ড, কালীবাড়ি মোড়, ক্যাপসুল মার্কেটের সামনে, বটতলা, পৌর উদ্যানের সামনে, নিরালা মোড়, বেবিস্ট্যান্ড এলাকায় মাঝেমধ্যেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
নতুন বাসটার্মিনালের দক্ষিণ পাশ থেকে হাসপাতাল গেট পর্যন্ত রাস্তার পাশে প্রায়ই বাসাইল-সখীপুর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের বাস পার্কিং করে রাখা হয়। যানজটে আটকা পড়লে অধিকাংশ সময় সেখানে যাত্রী নামিয়ে অটো ঘুরিয়ে অন্যদিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় যানজট তীব্র হয়। পুরোনো বাসস্ট্যান্ড, বটতলা, ড্রিস্টিক্ট গেট, সুপারি বাগান, কুমুদিনী কলেজ মোড় ও নিরালা মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও অন্য জায়গায় তাদের দেখা যায় না। এতে যানজট নিরসন হতেও বেশ সময় লাগে। আর তাতে ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীদের।
কলেজছাত্রী আসমা সিদ্দিকা বলেন, ‘রাস্তায় বের হলেই অটো আর অটো। কোনো পরিকল্পনা নেই, যে যার মতো চলে। যেখানে সেখানে থামায়। অনেক সময় রাস্তার মাঝখানে থামিয়েও যাত্রী তুলে নেয়।’
গৃহবধূ ঝুমা খান বলেন, ‘নতুন বাসটার্মিনাল থেকে নিরালা মোড় যেতে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজের সামনে, কুমুদিনী কলেজ মোড়ে, সুপারি বাগান, পুরোনো বাসস্ট্যান্ড ও ক্যাপসুল মার্কেটের সামনে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকা থাকতে হয়েছে। অটোর সংখ্যা অনেক বেশি। তা ছাড়া কেউ নিয়ম মানে না। এলোমেলো চলাচল করে। অনেক সময় অটো থেকে নেমে বাকি রাস্তা হেঁটেই যেতে হয়।’
অনেক অটোচালক যেখানে সেখানে ইউটার্ন নেয়। তখন সামনে পেছনে অন্য অটো আটকা পড়ে যাওয়ায় বাধে যানজট। অদক্ষ চালকদের কারণে যানজট হচ্ছে, তা অনেক অটোচালক স্বীকার করেছেন।
অটোচালক শাহাদত হোসেন বলেন, ‘আমাগো ধৈর্য নাই। অনেক ড্রাইভার কোনো নিয়ম জানে না। এজন্যও জাম বাজে। বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে গাড়ি ঘুরায়। একসময় ঘুরাতে গিয়া নিজেও আটকা পড়ে অন্য অটোগো আটকা রাখে।’
আরেক অটোচালক আরিফ হোসেন বলেন, ‘বড় গাড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় অটোরিকশা থামিয়ে রাখা হয়। তখন যানজট হয়। আবার গাড়ি প্লেস (কাউন্টারে অবস্থান নেওয়ার জন্য) করার সময়ও একই অবস্থা হয়।’
শহরের আদি টাঙ্গাইল ও বাজিতপুর এলাকার বিভিন্ন গ্যারেজে শেরপুর, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে আসা বেশ কয়েকজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক জানান, ‘তারা পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। ভাড়া বেশি হওয়ায় টাঙ্গাইল শহরে অটোরিকশা চালিয়ে ভালোই আয় হয়।’ অটোরিকশা চালক শাহজাহান বলেন, তিনি আগে সরিষাবাড়ি এলাকায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। এ কাজে উপার্জন কম হওয়ায় তার এক বন্ধুর পরামর্শে টাঙ্গাইল শহরে অটোরিকশা চালাতে আসেন।’
কুমুদিনী সরকারি কলেজের কলেজের কয়েকজন ছাত্রী জানান, টাঙ্গাইল শহর খুব বেশি বড় নয়। এখানে এত অটোরিকশা ও ইজিবাইকের প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত অটোর কারণে ১০ মিনিটের রাস্তা যেতে কখনও কখনও আধা ঘণ্টা সময় লেগে।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই-১) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘টাঙ্গাইল শহরে রাস্তার ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করে। জেলা পুলিশ সার্বক্ষণিক যানজট নিরসনে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারপরও অটোর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রশাসক শিহাব রায়হান বলেন, ‘পৌরসভার ভেতরে লাইসেন্সকৃত অটোর বাইরে যেসব অটো চলাচল করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এতে অটোর সংখ্যা কমে আসবে।’