সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৪৭ এএম
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৬ এএম
২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের পাহাড়ঘেরা আসকার দীঘির উত্তর পাড়ে তিনটি বেজমেন্টসহ ১৪ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। পরে দেখা যায়, পাহাড় কেটে সেখানে ভবন নির্মাণ করছে স্বপ্নীল ফ্যামিলি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে সিডিএর দেওয়া শর্তের ৬০ শতাংশ খালি রাখা এবং পাহাড় না কাটার বাধ্যবাধকতা মানা হয়নি। বরং টিন দিয়ে উঁচু প্রাচীর তুলে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা হয় পুরো নির্মাণকাজ। এর মধ্যেই পাহাড় কেটে ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণও শেষ হয়েছে।
সিডিএ সরেজমিন পরিদর্শনের পর নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেয়। নির্দেশনা অমান্য করে ভবন মালিকরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন এবং স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। স্থগিতাদেশকে পুঁজি করে ফের কাজ চালিয়ে যান। সর্বশেষ গত ২০ এপ্রিল সিডিএর করা আপিলে উচ্চ আদালত আগের স্থগিতাদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। পরদিন ২১ এপ্রিল সকালে সিডিএ অভিযান চালিয়ে ভবন ভাঙার কাজ শুরু করে।
সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, ‘এই ভবন নির্মাণে পাহাড় কাটা হয়েছে। আমি তখন দায়িত্বে থাকলে এই অনুমোদন দিতাম না। এখন নির্মাণাধীন ভবনগুলোকে ঠিক করার চেষ্টা করছি। পুরোনো ভবনে অনেক মানুষ থাকায় সেখানে এখনই যাওয়া যাচ্ছে না।’
সিডিএর তথ্যমতে, বর্তমানে নগরীতে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১টি ভবনের মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৬৭ হাজারই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রাম মহানগর ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী আট স্তরের অনুমোদন প্রক্রিয়া থাকলেও অধিকাংশ ভবন মালিক নকশা অনুমোদনের পর পরিবেশ, অগ্নিনির্বাপক ও ইমারত আইন মানেন না। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
এর আগে ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর মাঝিরঘাট এলাকায় দুটি ভবন হেলে পড়া এবং ফাটলের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা। এরপরও নানা জায়গায় অনুমোদিত তলার চেয়ে বেশি করে ভবন নির্মাণ, অপর্যাপ্ত পাইলিং এবং প্রকৌশলীর পরামর্শ ছাড়াই নির্মাণের অভিযোগ আছে। সিডিএর অথরাইজড অফিসারদের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে।
এক ভবন মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সিডিএর অফিসারদের ম্যানেজ করলে অনিয়মের মধ্যেই অনুমোদন পাওয়া যায়। তবে এজন্য আর্থিক চুক্তি লাগে।’
এ বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগে অনুমোদনের ফাইল চেয়ারম্যান হয়ে যেত না। এখন থেকে সব প্ল্যান চেয়ারম্যান দপ্তর হয়ে যাবে। এতে অনিয়ম কমবে। ভবন নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই ইমারত আইন মানতে হবে। নয়তো নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।’