× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নতুন গতি

নুপা আলম, কক্সবাজার

প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:২৪ এএম

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৯ এএম

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নতুন গতি

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসন নিয়ে ফের জোরালো আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রায় সাত বছর ধরে আশ্রয় নেওয়া এই জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় এবার বড় অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। মিয়ানমার সরকার প্রথম দফায় ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এদিকে প্রস্তুতি নিয়ে থেমে নেই বাংলাদেশও। সীমান্তবর্তী এলাকায় আধুনিক ট্রানজিট সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। শিগগিরই দুটি ট্রানজিট সেন্টার বুঝে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। টেকনাফ ও ঘুমধুমে আরও দুটি ট্রানজিট সেন্টার প্রস্তুত রয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন বলছে, এসব কেন্দ্র থেকে নিরাপত্তা যাচাই, নিবন্ধন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে।

ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলন থেকে আলোচনা শুরু

সম্প্রতি ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেন, যা অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি কাড়ে। সম্মেলনে তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য একটি মানবিক চ্যানেল স্থাপনের আহ্বান জানান, যাতে সেখানে বাস্তুচ্যুতি বন্ধ করা যায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের যদি মীমাংসা না হয়, তাহলে সমগ্র অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। বিমসটেক অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, বিশেষ করে রাখাইনের বিরোধপূর্ণ পক্ষগুলোর মধ্যে সমাধানের জন্য সংলাপ চালাতে পারে। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে স্থায়ীভাবে প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে মিয়ানমারকে আরও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার

গত ৪ এপ্রিল বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান ও মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ইউ থান শিউ। বৈঠকে খলিলুর রহমানকে এ কথা জানিয়েছেন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ইউ থান শিউ জানান, কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া তালিকাভুক্ত ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার যোগ্য বলে জানিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে আছে আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা।

পরে বাংলাদেশ ২০১৮-২০ সালে ছয় ধাপে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের তালিকা দেয়। সেই তালিকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা নিয়ে মিয়ানমারের নতুন দৃষ্টিভঙ্গিকে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে বড় অগ্রগতি বলছে অন্তর্বর্তী সরকার।

মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের দেওয়া তালিকায় থাকা ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে মিয়ানমার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত যাওয়ার যোগ্য বলে শনাক্ত করেছে। এ ছাড়া চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে ৭০ হাজার রোহিঙ্গার নাম ও ছবি আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর বাইরে আরও সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাইয়ের কাজ জরুরি ভিত্তিতে করবে জান্তা সরকার।

জাতিসংঘ মহাসচিবের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন

গত ১৪ মার্চ সারাদিন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তারা অংশ নিয়েছেন এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে সলিডারিটি ইফতারে। এরপর কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন আন্তোনিও গুতেরেস। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একমাত্র সমাধান তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন। তবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন উদ্যোগ কতটা সম্ভব, সেটি নিয়েও উদ্বেগের কথা জানান তিনি।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এর মধ্যে ১০ লাখ ৫ হাজার ৫২০ জন নিবন্ধিত। পরিবার রয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ২৭৪টি। আশ্রিতদের মধ্যে ৫২ শতাংশ শিশু, ৪৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ শতাংশ বয়স্ক। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ শতাংশ নারী।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ ও ঘুমধুমে আগে থেকেই দুটি ট্রানজিট সেন্টার প্রস্তুত রয়েছে। সম্প্রতি আরও দুটি ট্রানজিট সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে। এগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে এবং শিগগিরই হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য ট্রানজিট সেন্টারগুলো তৈরি আছে। আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ৬ কোটি টাকা দিয়ে আরও দুটি ট্রানজিট সেন্টার নির্মাণ করেছি। ঠিকাদার আমাকে চিঠি দিয়েছে এটি হস্তান্তর করবে তারা।

তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালের তালিকা অনুযায়ী অনেক রোহিঙ্গা এখন আর জীবিত নেই, অনেকে পরিবার গঠন করেছেন, নতুন শিশুও জন্ম নিয়েছে। সে বিবেচনায় তালিকাটি হালনাগাদ করা জরুরি। ২০২৩ সালে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের একটি পাইলট প্রকল্পে দেখা গেছে, পূর্বে তালিকাভুক্ত ৮০০ জনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১০০ জনে। তিনি ধারণা করছেন, প্রথম ধাপে ফেরত পাঠানোর জন্য নির্ধারিত ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার প্রকৃত সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে জটিলতা থাকলেও আগামী ঈদে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে যেন ঈদ উদযাপন করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, যাতে রাখাইনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং স্বেচ্ছায়, সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। এ ছাড়া মিয়ানমার সরকার এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে সম্মত হওয়াকে বর্তমান সরকারের বিশাল কূটনৈতিক সফলতা। এটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপটি প্রয়োজন ছিল রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য।

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন সামনে। আমরা চাচ্ছি রোহিঙ্গারা সেখানে সম্মিলিতভাবে তাদের অবস্থান তুলে ধরুক, যাতে তারা নিরাপদে স্বদেশে ফিরতে পারে। আমরা সব দরজা খোলা রেখে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

কক্সবাজারের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, জেলার উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর তুলনায় রোহিঙ্গার সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় জনজীবনে চাপ তৈরি হয়েছে। উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গারা এখানে অবস্থান করছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হলে স্থানীয় জনগণ একটি বড় বোঝা থেকে মুক্তি পাবে।’

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সাল থেকেই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমার এর আগেও কোনো রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি। তবে এবার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে মিয়ানমারের সম্মতির বিষয়টি একটি বড় কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা