ইফতেয়ার রিফাত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৫৯ এএম
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১১:০৬ এএম
পৌর এলাকার অধিকাংশ নলকূপ ও মোটর দিয়ে পানি উঠছে না। প্রবা ফটো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। এসব এলাকার অধিকাংশ পাম্প ও নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে সুপেয় ও গৃহস্থালির কাজে পানির সংকটে এলাকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি বেশিরভাগ পুকুর ও জলাশয় ভরাট হওয়ায় পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পানির স্তর ৪০ থেকে ৬০ ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় পৌর শহরের বাসাবাড়িতে নলকূপ ও মোটর দিয়ে পানি তোলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় পানির স্তর ৩০ থেকে ৬০ ফুট নিচে নেমে গেছে। এতে জেলার অন্তত ৩৩ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভোগান্তির শিকার।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় সরকারি হিসাবে ৫৪ হাজার ৬৫১টি হস্তচালিত নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে গত দুই যুগে ১২ হাজার ২০৮টি নলকূপ বন্ধ হয়ে গেছে। অগভীর নলকূপ রয়েছে ১৯ হাজার ৬০০টি। এর মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৯ হাজার ৯১০টি। অগভীর নলকূপের গভীরতা ৬০ থেকে ৭৫ মিটার।
সদর উপজেলায় এলাকাভেদে পানির স্থিতিতল সর্বনিম্ন ৩৫ দশমিক ৩৬ ফুট (১০ দশমিক ৭৮ মিটার) থেকে সর্বোচ্চ ৪৪ দশমিক ৯৮ ফুট (১৩ দশমিক ৭১ মিটার)। তবে সদর উপজেলায় সরকারিভাবে ১৫০ মিটার বা ৪৯২ ফুট গভীরতায় নিচে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। আর ব্যক্তি উদ্যোগে অগভীর নলকূপ স্থাপনে ১৮০ থেকে ২৫০ ফুট গভীরে যেতে হয়। সদরে সরকারি ২ হাজার ৪৭৩টি গভীর নলকূপ চালু রয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৪৮৬টি নলকূপ বন্ধ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার পানি শাখা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভায় পানির গ্রাহকের সংখ্যা ৩ হাজার ৪০০। তাদের জন্য ৩ লাখ ৪০০ হাজার লিটার পানি দরকার। পানি উৎপাদনের ৯টি নলকূপের মধ্যে সচল আছে চার-পাঁচটি। পৌর শহরের ভাদুঘর, সদর উপজেলা পরিষদ, তিতাসপাড়া ও পাইকপাড়ায় পানি শাখার পানি উৎপাদনের নলকূপ বন্ধ।
বর্তমানে ২ লাখ ৬০ হাজার লিটার পানি গভীর নলকূপ ব্যবহার করে ভূগর্ভ জলাধার থেকে তোলা হয়। পৌর এলাকার অধিকাংশ নলকূপ ও মোটর দিয়ে পানি উঠছে না। গত এক যুগে সরকারি উদ্যোগে স্থাপন করা ৬০টি নলকূপের মধ্যে বর্তমানে ১০টি সচল।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন দত্ত বলেন, ‘পৌরসভায় পানির স্তর ৪০ থেকে ৬০ ফুট নিচে নেমে গেছে। এক যুগ আগে ১২০ থেকে ১৬০ ফুট গভীরে হস্তচালিত নলকূপ দিয়ে পানি আসত। এখন ১৮০ ফুট নিচ থেকেও পানি আসছে না। এখন পানি পেতে ২০০ থেকে ২২০ ফুট গভীরে যেতে হয়। আগে ২৯০ থেকে ৩০০ ফুট নিচ থেকে অগভীর নলকূপে পানি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ৪২০ থেকে ৪৫০ ফুট নিচে যেতে হয়।’ তিনি বলেন, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মাত্রাতিরিক্ত সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন, পুকুর ও খোলা জায়গা ভরাট, পুকুর, খাল ও নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সদরের উপসহকারী প্রকৌশলী সামিরা আক্তার বলেন, ‘সদরে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। অনেকেই পানির সমস্যায় ভুগছেন।’
সরাইল উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী রূপক মিয়া বলেন, ‘সরাইলে পানির স্তর ৩৭ ফুট নিচে নেমেছে। বর্তমানে ৫৫০ ফুট নিচে গভীর ও ১৮০ থেকে ২০০ ফুট নিচে অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। আর গভীর নলকূপ সচল ১ হাজার ৪৫৭টি এবং বন্ধ আছে ৬১টি।’
জেলা তথ্য বাতায়নের তথ্যে জানা গেছে, পুরো জেলায় ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৭টি খানা রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪১ এবং সদর উপজেলায় ৫ লাখ ২১ হাজার ৯৯৪ জন মানুষের বাস। পৌরসভাসহ উপজেলায় প্রায় ৭০-৮০ হাজার নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। এতে বিশাল এই জনগোষ্ঠী সুপেয় ও গৃহস্থালির কাজে পানির সংকটে ভুগছে। শহরের কান্দিপাড়া, কাজীপাড়া, শিমরাইলকান্দি, হালদারপাড়াসহ পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকায় প্রায় এক মাস ধরে নলকূপে এক ফোঁটাও পানি ওঠে না। এসব এলাকার বাসাবাড়ির মোটর দিয়েও পানি ওঠে না। সুপেয় পানির জন্য মানুষের মধ্যে চলছে হাহাকার।
কাজীপাড়ার বাসিন্দা আলী মিয়া বলেন, ‘বাড়ির নলকূপসহ মোটর দিয়েও পানি ওঠে না।’ শিমরাইলকান্দির বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, ‘সাধারণ মোটরে পানি উঠছে না।’ এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাহমিনা পারভীন বলেন, এটি শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়, সারা দেশেরই সমস্যা।