আতিফ রাসেল, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:২৩ এএম
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৪৮ এএম
পিচ তুলে খোয়া বিছিয়ে রাখা সড়কে যানবাহন চলাচলের সময় ধুলায় ঢেকে যায় চারপাশ। ঘাটাইল উপজেলার সাইটশৈলা গ্রামে সোমবারের দৃশ্য। প্রবা ফটো
টাঙ্গাইলের উত্তরাংশে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংস্কারকাজ লাখো মানুষের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের পালিমা থেকে ঘাটাইলের লোকেরপাড়া পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কটির সংস্কারকাজ নির্ধারিত সময়ের দেড় বছর পরও শেষ হয়নি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে আশপাশের অন্তত ২৫ গ্রামের বাসিন্দা।
ঘাটাইল উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২ কোটি ৯৮ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে ৪ দশমিক ৯৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি সংস্কারের কাজ পায় ‘এম/এস ইসলাম ব্রাদার্স লিমিটেড’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দরপত্র অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেছে ১ বছর ৮ মাসেরও বেশি সময় আগে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পালিমা থেকে লোকেরপাড়া পর্যন্ত সড়কটি গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। টাঙ্গাইল জেলা শহরে যাতায়াতে প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহার করে লাখো মানুষ।
এ ছাড়া এই পথ দিয়েই শিয়ালকোল হাট, খায়েরপাড়া হাটসহ আশপাশের ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ চলাচল করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পিচ ঢালাই সড়কটির স্থানে স্থানে গর্ত সৃষ্টি হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছিল। এ অবস্থায় সড়কটি সংস্কারে প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্প কাজের শুরুতেই পুরো সড়কের কার্পেটিং উঠিয়ে ফেলা হয়। আর তাতে যেন জনভোগান্তিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। কেননা এরপর আর কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। সড়কটি এভাবে দীর্ঘদিন ধরে যানবাহন ও মানুষ চলাচলের অযোগ্য করে ফেলে রেখে কার্যত লাপাত্তা হয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দিন দিন সড়কটির অবস্থা আরও করুণ হয়ে পড়ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কার্পেটিং ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখায় ইট-বালু গুঁড়ো হয়ে ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে সড়কটি। যানবাহন চলাচলের সময় এসব ধুলা উড়ে গিয়ে ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও গাছপালায় লাল আস্তর জমিয়ে দিচ্ছে। ধুলা ও খোয়াভরা এই সড়কে পথচারীদের চলাচলও হয়ে উঠেছে কষ্টসাধ্য।
সাইটশৈলা, খায়েরপাড়া, যোগীহাটি ও লোকেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ‘সড়কে চলাচল তো দূরের কথা, ধুলাবালুতে ঘরেও থাকতে পারছি না। ঘরের খাবারদাবার, জামাকাপড়, আসবাবÑ সবকিছু ধুলাবালুতে নষ্ট হচ্ছে। ধুলার কারণে সবার সর্দি-কাশি লেগেই আছে।
যোগীহাটি খন্দকারনগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসার সময় ট্রাক, ট্রাক্টর ও অটোর ধুলায় কাপড় নোংরা হয়ে যাচ্ছে; শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
চলাচলকারী যাত্রীরা জানান, এই রাস্তায় চলতে গেলে মনে হয় পেটের ভেতর নাড়িভুঁড়ি বুঝি ছিঁড়ে যাচ্ছে। আর নাক-মুখে রুমাল চাপা দিয়েও ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। এই ধুলাবালি নাক-মুখ গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করায় অসুস্থ হয়ে পড়ছি। রোগীকে হাসপাতালে নেওয়াও আরেক বিপদ ডেকে আনছে।
অটোভ্যান চালক মো. শাহাজামাল, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক সোনা মিয়া ও হুমায়ুন কবির নামের এক মোটরসাইকেল চালক জানালেন, এই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চালানো খুবই কষ্টসাধ্য। যানবাহনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ক্ষতিসহ প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
যোগীহাটির শিক্ষক শফিউর রহমান বলেন, ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। তাই দ্রুত সড়কটির উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ শুরুর দাবি আমাদের।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় খায়েরপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী আবু আলম খান, সাইটশৈলা গ্রামের বাসিন্দা কায়কোবাদ, মো. মাসুমসহ এলাকাবাসী একই দাবি জানান।
আবুল হোসেন নামের এক এনজিও কর্মকর্তা বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করি। সড়কের বিভিন্ন স্থানে খোয়া উঠে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ঝাঁকুনিতে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। তাই অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি প্রশাসনের কাছে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম/এস ইসলাম ব্রাদার্স লিমিটেডের পক্ষ থেকে এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. হারুন বলেন, ‘প্রকল্পকাজে গতি আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং দ্রুত কাজ সম্পন্ন হবে।’
গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক সংস্কারের নামে এভাবে জনভোগান্তি সৃষ্টির বিষয়ে জানতে ঘাটাইল উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু সাঈদ এই বিষয়ে বলেন, ‘সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। শিগগির কাজ পুনরায় শুরু হবে।’