× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্ববাজারে রপ্তানি হচ্ছে রংপুরের জুতা

এহসানুল হক সুমন, রংপুর

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৫৫ এএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

রংপুরের পল্লীতে স্থাপিত কারখানায় তৈরি হচ্ছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের জুতা। এখানকার উৎপাদিত জুতা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে। উৎপাদিত জুতার শতভাগ রপ্তানি হওয়ায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আনছে কোম্পানিটি। সেই সঙ্গে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় পাল্টে গেছে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান। 

জানা যায়, নীলফামারী সৈয়দপুরের বাসিন্দা প্রবাসী উদ্যোক্তা হাসানুজ্জামান তার বড় ভাই মিলে দেশে একটি জুতার কারখানা দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এরপর উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও সহজলভ্য শ্রমিকের কথা চিন্তা করে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা সদরের ঘনিরামপুর গ্রামে আন্তর্জাতিক মানের জুতা উৎপাদন কারখানা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেন। ২০১৮ সালে দেড়শ কোটি টাকা মূলধন বিনিয়োগ করে সাড়ে পাঁচ একর জমির ওপর ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে জুতা তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। কারখানায় আনা হয় আধুনিক যন্ত্রপাতি। এলাকার সাড়ে ৩শ জন কর্মী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিছুদিনের মধ্যেই কারখানায় জুতা উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু উৎপাদনে গতি আসতেই ২০২০ সালে করোনা আঘাত হানে। ফলে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। করোনার ধাক্কা সামলিয়ে ২০২২ সাল থেকে পুনরায় উৎপাদনে ফেরে ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস। বর্তমানে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার কর্মী ১৫ হাজার জোড়া জুতা উৎপাদন করছে, যা ভারত, দুবাই, পোল্যান্ড, জার্মানি, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ থেকে প্রতিবছর আয় হচ্ছে ৩শ কোটি টাকা। পণ্যের চাহিদা বাড়ায় গেল ফেব্রুয়ারি মাসে কারখানার তৃতীয় ইউনিট চালু করেছে কর্তৃপক্ষ। এ কারখানায় কাজ করা শতকরা ৮০ ভাগ কর্মী তারাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা এবং কর্মীদের শতকরা ৯০ ভাগ নারী তাদের সুনিপুণ দক্ষতায় জুতা উৎপাদন করে চলেছে। ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলাকার বেকারত্ব ঘুচেছে। অনেকে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ ছেড়ে এসে নিজ এলাকার এ কারখানায় কাজ করছেন। অনেক পরিবারের একাধিক সদস্য কারখানায় কাজ করে নিজেদের পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন। 

সরেজমিন দেখা যায়, ঘনিরামপুর এলাকার ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের বড় বড় তিনটি ইউনিটে জুতা উৎপাদনের কাজ চলছে। প্রথম ভবনের নিচ তলায় জুতার বিভিন্ন অংশ কাটিং এবং সেলাইয়ের কাজ করেন কর্মীরা। কাটিং মেশিন ও সেলাইযন্ত্রের শব্দে মুখরিত পুরো ভবনটি। মেশিনের সঙ্গে সমান তালে চলছে তাদের হাত। কারও যেন একটু বিশ্রাম নেওয়ার ফুরসত নেই। সুপারভাইজাররা প্রতিটি সারিতে কর্মীদের কাজের মান যাচাই করছেন। শ্রমিকদের ৯০ ভাগ নারী হওয়ায় তাদের দেখভালের জন্য আলাদা নারী সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে কারখানায়। এ ছাড়া কাজে স্বস্তি আনতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থাসহ কর্মীবান্ধব যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি ইউনিটে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও শ্রমিকদের কারখানায় প্রবেশে একাধিক সিঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় জুতায় আঠা লাগানো, তাপ দেওয়া, স্টিকার লাগানো, প্যাকেজিংসহ বিভিন্ন কাজ করা হয়। 

ঘনিরামপুরের বাসিন্দা কর্মী লিপি আক্তার বলেন, আমি কারখানায় আড়াই বছর ধরে জুতার কান তৈরি করি। এরপর সেটা আরেকজন কর্মী সুইয়িংয়ের কাজ করে। প্রতি মাসে আমার আয় হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এখানকার কাজের পরিবেশ অনেক ভালো। ফ্যাক্টরি হওয়াতে আমাদের পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। 

ইসলাম মিয়া নামে আরেকজন বলেন, আগে গার্মেন্টসে কাজ করতাম। যখন শুনলাম নিজ গ্রামে এমন কারখানা হয়েছে তখন চাকরি ছেড়ে গ্রামে চলে আসি। কারখানায় আমি স্টিকার লাগানো ও প্যাকেজিংয়ের কাজ করি। বাড়িতে থেকে এখানে কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো আছি। 

শ্রমিক কল্যাণ সুপারভাইজার মাহমুদা আক্তার বলেন, এখানে যারা কাজ করেন তাদের বেশিরভাগই স্থানীয় বাসিন্দা। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা এসব কর্মীর এ জুতা তৈরির কারখানায় কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকেই এখন ভালো রয়েছে। এ কারখানা প্রতিষ্ঠার পর এলাকার শতকরা ৮০ ভাগ বেকারত্ব দূর হয়েছে। যেহেতু এখানে নারী কর্মী বেশি কাজ করে তাই তাদের দেখভাল করার জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। আমি তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি। 

ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. রেহান বখত বলেন, আমাদের কারখানায় উৎপাদিত জুতা পোল্যান্ড, তুরস্ক, দুবাই, জার্মানি, কানাডা, আমেরিকা, ভারতে যাচ্ছে। কারখানার উৎপাদিত শতভাগ জুতা রপ্তানি হয়। জুতার গুণগত মান বজায় রাখতে কারখানায় বিদেশি বিশেষজ্ঞ কাজ করে থাকেন। 

ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রবাসে থাকাকালে আমাদের দুই ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য কিছু করা। ২০২৬ সালে আমরা স্টক মার্কেটে যাব। দেশের কিছু জায়গায় আউটলেট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। ভারত ও ইউরোপ আমাদের বড় মার্কেট। পণ্যের মান উন্নয়নে কারখানায় বাংলাদেশ, চীন ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা