নারায়ণগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:২৬ পিএম
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:২৬ পিএম
হাড়িদোয়া নদীতে খননযন্ত্র বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। মঙ্গলবার আড়াইহাজার উপজেলার মোহনপুর থেকে তোলা। প্রবা ফটো
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার মেঘনা ও হাড়িদোয়া নদী দীর্ঘদিন ধরে হয়ে উঠেছে অবৈধ বালু উত্তোলন ও নৌপথে চাঁদাবাজির অভয়ারণ্য। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক চক্র—কখনও ক্ষমতাসীন, আবার কখনও বিরোধীদলের ছত্রচ্ছায়ায়—ইজারা ছাড়াই অবাধে বালু উত্তোলন করে আসছে। প্রশাসনের মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযান হলেও বাস্তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
নদীতীরবর্তী মানুষের কৃষিজমি প্রতিনিয়ত নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি মেঘনায় চলাচলকারী নৌযান থেকেও মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এসব অনিয়ম, দখলদারি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে খাগকান্দা ইউনিয়নের সচেতন নাগরিকরা সম্প্রতি একটি পদযাত্রা ও গণসমাবেশের আয়োজন করেছেন।
জানা গেছে, আগে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা এই চক্রের নেতৃত্ব দিতেন। ৫ আগস্ট দেশে গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে গেলে কিছুদিন বালু তোলা বন্ধ থাকলেও, পরে বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা সেই শূন্যস্থান পূরণ করেন। বর্তমানে হাড়িদোয়া ও মেঘনার বিভিন্ন অংশে বিএনপির নেতাদের নেতৃত্বে বালু উত্তোলন চলছে, যা জমি ভাঙনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
স্থানীয় কৃষক সোহেল মিয়া জানান, হাড়িদোয়া নদীর পাশে তার দুই বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে মরিচ, গম, শাকসবজির চাষ করেছেন। কিন্তু বিএনপির প্রভাবশালী সিন্ডিকেট বালু তোলা চালিয়ে যাওয়ায় তার জমিটি নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। এছাড়া কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নেও একই ধরনের অবস্থা বিরাজ করছে। এসব এলাকায় অবৈধভাবে বালু তোলায় কৃষকরা বোরো ধানের জমি হারানোর শঙ্কায় আছেন।
অন্যদিকে মেঘনা নদীপথে বালুবাহী বাল্কহেড ও নৌযান থামিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চালকরা।
কাউসার আহমেদ নামের এক চালক নিয়মিত এই পথে বাল্কহেড নিয়ে যাতায়াত করেন। তিনি জানান, টাকা না দিলে আমাদের গালাগাল, এমনকি মারধর করা হয়। টাকা না দিতে পারলে জ্বালানি তেল দিতে হয়। নদীপথের চাঁদাবাজির দখল নিয়ে ইতোমধ্যে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে খাগকান্দায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপির দুই পক্ষ। এতে ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আলমগীর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
এসব ঘটনার বিরুদ্ধে গত শুক্রবার খাগকান্দায় পদযাত্রা ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন, বৈষম্যবিরোধী আড়াইহাজারের সমন্বয়ক জোবায়ের হোসেনসহ স্থানীয় নেতারা এসব অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এদিকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যারা এসব অপরাধ করছে, তাদের দায় দল নেবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার। তিনি বলেন, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি, দখলদারি বা কোনো অপরাধ করলে দল এর দায় নেবে না। কেউ যদি অন্যায়-অনিয়ম করে, এর দায় তাকেই নিতে হবে। এসব অপরাধ শক্ত হাতে দমনে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাত হোসেন বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন ও নৌপথের চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।