ভুবন সেন, খানসামা (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০৩ এএম
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৪৫ এএম
প্রবা ফটো
একটি সেতুর জন্য দীর্ঘদিনের অপেক্ষা দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁওয়ের চার উপজেলার মানুষের। বছরের পর বছর ভোগান্তি পোহালেও সুরাহা মিলছে না দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার জয়গঞ্জ ঘাটে করতোয়া নদী পারাপারে। সেখানে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছিল স্থানীয়রা।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থেকে দিনাজপুরের খানসামা, ঝাড়বাড়ি পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও ছোট সেতু কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। জয়গঞ্জ ঘাটে সেতু নির্মাণ হলে ঠাকুরগাঁও থেকে সড়কপথে নীলফামারীর দূরত্ব কমবে ১২ কিলোমিটার। আর ঠাকুরগাঁও থেকে নীলফামারী হয়ে রংপুরের দূরত্ব কমবে প্রায় ২০ কিলোমিটার। যোগাযোগ সহজ হবে তিন জেলার চার উপজেলার ৯ লাখ মানুষের।
স্থানীয়রা জানান, দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ি ইউনিয়নের জয়গঞ্জ গ্রামের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। উত্তরাঞ্চলের অনেক নদী নাব্যতা হারিয়ে মরা নদীতে পরিণত হলেও বর্ষায় আত্রাই নদী খরস্রোতা হয়ে ওঠে। খানসামা, নীলফামারী সদর ও বীরগঞ্জ উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীর বেশিরভাগ অংশ শুকিয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে নদী পারাপারের জন্য জয়গঞ্জ ঘাটে নির্মিত হয়েছে অস্থায়ী কাঠের সেতু। এতে সময় তুলনামূলক কম লাগায় নীলফামারী সদর থেকে বহু মানুষ এই পথে খানসামা, বীরগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে যাতায়াত করেন।
খানসামার জয়গঞ্জ ঘাটের ইজারাদার আনোয়ারুল ইসলাম ওই কাঠের অস্থায়ী সেতুটি নির্মাণ করেছেন। এর ওপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার কৃষক, কর্মজীবী নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীরা পারাপার হন। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ভ্যান ও মোটরসাইকেলেও চলাচল করে। অস্থায়ী এই সেতুতে চলাচলের জন্য দিতে হয় টোল। সেতু পার হয়ে আবার পাড়ি দিতে হয় বালুময় পথ, তাই যাতায়াতে ভোগান্তি যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশেষ করে রোগ ও পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। আর বর্ষায় নদী পারাপারের জন্য একমাত্র ভরসা নৌকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানে একটি সেতুর জন্য বিগত সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে বহুবার আবেদন করেও লাভ হয়নি। বিভিন্ন সময় নির্বাচনের আগে ভোটের জন্য প্রার্থীরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে ভুলে যান। সেতু নির্মাণের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
জয়গঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি নদীটির ওপর দিয়ে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে নৌকায় পারাপার হতে হয়। সারা বছরই মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই পথে পারাপার করেন।
নীলফামারী থেকে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, একবার গেলে আমাকে ১০ টাকা দিতে হয়। সঙ্গে যদি একটা মোটরসাইকেল নেই সেক্ষেত্রে ২০ টাকা দিতে হয়। দিনে যে কয়বার যাতায়াত করব সে কয়বারই এই টাকা দিতে হয়।
বীরগঞ্জের শতগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা শুকুর আলী বলেন, জন্ম থেকে শুনে আসছি এখানে সেতু নির্মাণ করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের এমপির কাছে একটি সেতুর জন্য কত আন্দোলন, কত মানববন্ধন করেছি আমরা। ভোট এলে জনপ্রতিনিধিরা আশ্বাস দেয়, সেতু তৈরি করে দেবে। কিন্তু ভোটের পর কারও কোনো খবর থাকে না। আওয়ামী লীগের পতন হয়ে গেল। কিন্তু আত্রাইয়ে সেতু হলো না।
ঝাড়বাড়ি-জয়গঞ্জ খেয়াঘাট সেতু বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শেখ জাকির হোসেন বলেন, এখানে একটি সেতু হলে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে। এতে সহজ হয়ে উঠবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাণিজ্য। কৃষি খাতসহ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে। একটি সেতু নির্মাণের অভাবে এলাকার লোকজন পিছিয়ে পড়ছে।
এলজিইডি দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল। এজন্য ঢাকা থেকে আমাদের একটি ডিজাইনও পাঠিয়েছিল। আমরা সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবারও ঢাকায় পাঠিয়েছি। পরবর্তী সময়ে আর কোনো নির্দেশনা আসেনি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।