মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ১১:১৯ এএম
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৩৩ এএম
নুর ইসলাম
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (খ-সার্কেল) মিঠাপুকুর অফিসের সহকারী উপপরিদর্শক নুর ইসলামের বিরুদ্ধে মাদক কারবারিদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাসিক চাঁদার কিস্তি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও কোনো অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলেও অভিযোগ।
গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (খ সার্কেল) মিঠাপুকুরে কর্মরত সহকারী উপপরিদর্শক নুর ইসলামের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ‘তিনি শাহিনুর নামে এক মুদি দোকানির (মাদক কারবারি) থেকে মাসিক চাঁদা নেওয়ার সময় দুই যুবকের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে লাঠি হাতে দুই যুবক তাকে (নুর ইসলামকে) আঘাত করার চেষ্টা করছেন। তাকে রশি দিয়ে বাঁধার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। এ সময় সহকারী উপপরিদর্শক নুর ইসলাম তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল নিয়ে সটকে পড়ার চেষ্টা করেন।’
অভিযোগ রয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (খ সার্কেল) মিঠাপুকুর অফিসে যোগদানের পর থেকেই নুর ইসলাম মাদক কারবারিদের কাছে মাসিক চুক্তিতে চাঁদা আদায় করছেন। কখনও তিনি নিজে, কখনও সোর্সের মাধ্যমে আবার কখনও তার দেওয়া বিকাশ নম্বরে প্রতি মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে মাসিক চাঁদা নেন। যারা মাসিক চাঁদা দিতে পারে, তারা নির্ভয়ে মাদক কারবার চালিয়ে যেতে পারে। এমনকি কোনো কারণে সেসব এলাকায় অভিযান পরিচালিত হলেও চুক্তিতে যুক্ত মাদক কারবারিরা আগাম খবর পেয়ে যায়। আর যাদের সঙ্গে চুক্তি নেই অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মাদক কারবারিদের অনেকেরই অভিযোগ, ‘একবার গ্রেপ্তার হলে নুর ইসলামের সঙ্গে চুক্তি বাধ্যতামূলক।’
মিঠাপুকুর উপজেলার ২ নম্বর রানীপুকুর ইউনিয়ন এবং ৩ নম্বর পায়রাবন্দ ইউনিয়ন ঘুরে ছোট-বড় প্রায় ৪২ জন মাদক কারবারির তথ্য মিলেছে। যেখানে বেশ কয়েকজন মাদক কারবারি নুর ইসলামকে বা তার সোর্সকে চাঁদা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ধরন অনুযায়ী মাসিক চাঁদা দেন। যেমন, হাঁড়িয়ার জন্য ১ হাজার, গাঁজা ব্যবসায়ী ২ হাজার, চোলাই মদ ৩ হাজার, ইয়াবা ৫ হাজার, হেরোইন ৮ হাজার, ফেনসিডিল ব্যবসায়ীর ১০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে মাদকদ্রব্যের এই কর্মকর্তা ঘুষের মাসিক চাঁদা হিসেবে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আদায় করেন।
জেলহাজতে থাকা একজনের নিকটাত্মীয় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ‘ব্যবসা বন্ধ। কিন্তু নুর ইসলাম ঈদের আগের দিন পর্যন্ত টাকার জন্য ঘুরেছে। বারবার ফোন দিয়ে ঘুষের টাকা চেয়েছে। বলেছে এবারের কিস্তি বকেয়া পড়েছে।’
বৈরাগীগঞ্জের ফেনসিডিল ব্যবসায়ী এক নারী বলেন, ‘ব্যবসা বন্ধ হোক আর চালু থাকুক, নুর ইসলাম ভাইয়ের চাঁদা বন্ধ থাকে না। প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহে কিস্তিতে ঘুষ নেবে, তবু আমাদের ছাড় নেই।’
দমদমা এলাকার একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘এখানে নদীর ওপর যে জুয়া খেলা চলে সেখানে তাকে (নুর ইসলাম) নিয়মিত পাওয়া যায়। তাস খেলা তার প্রধান পেশা।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নুর ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ভাই এসব বাদ দেন। আমি রবিবারে আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।’ পরবর্তীতে তিনি প্রেস ক্লাবে এসে বলেন, ‘কিছু লিখলেও যাতে আমি বদলি হই, সে রকম লেখেন।’
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (খ সার্কেলের) উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ আমরা যাচাই-বাছাই করছি। ইতোমধ্যে ডিডি স্যার বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।’