কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:০৩ পিএম
তপ্ত রোদেও সৈকতে ভ্রমণ পিপাসুদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশে কোনো কমতি নেই। প্রবা ফটো
ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সকাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সবকটি পয়েন্ট লোকে-লোকারণ্য ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পর্যটক। যেদিকে চোখ যায়- শুধু মানুষ আর মানুষ। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই বিস্তৃত বালিয়াড়ি সৈকতের কোথাও। কারও মনে আনন্দ প্রথমবার সমুদ্র দেখার, আর কারও মনে আনন্দ নোনাজলের স্পর্শে।
তপ্ত রোদেও সৈকতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের মনে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশে কমতি নেই। সৈকতে ঘুরতে আসা অধিকাংশ পর্যটকের গন্তব্য গোসলে নেমে সাগরের লোনাজলের স্পর্শ নেওয়া। আর পর্যটকের ঈদ আনন্দের উচ্ছ্বাসের কাছে যেন হার মেনেছে সাগরের উত্তাল ঢেউও। কেউ বসে আছে কিটকটে (বিচ ছাতা)। আবার অনেকেই সৈকতের বালিয়াড়িতে ছোটাছুটিতে মেতেছেন নিজের মতোই। বিচ বাইক, ঘোড়ায় চড়ে কেউ কেউ নিজের ছবি ধারণে ব্যস্ত।
আর কোলাহলময় যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ কাটাতে ছুটে আসা ভ্রমন পিপাসুরা বলছেন, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার ঘুরতে এসে তারা তৃপ্ত-পরিতৃপ্ত।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য বলছে, ঈদের টানা ছুটির দ্বিতীয় দিনেও লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সৈকত নগরী কক্সবাজার। রমজানের পুরো এক মাস পর্যটকশূন্য থাকলেও ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে এখন উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। আর ঈদের আনন্দ উপভোগে পর্যটকদের পাশাপাশি সৈকতে ভিড় করছেন স্থানীয় দর্শনার্থীরাও।
এদিকে কাঙ্ক্ষিত পর্যটক সমাগম হওয়ায় খুশি হোটেল-মোটেল মালিকরা। তারা বলছেন, ঈদের দ্বিতীয়দিনে সাড়ে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেলের অন্তত ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং রয়েছে। তৃতীয়দিন থেকে শতভাগ হোটেল কক্ষ বুকিং থাকবে। আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটক আগমনের ঢল অব্যাহত থাকবে।
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ঈদের প্রথম দিন তেমন পর্যটকের দেখা মিলেনি। দ্বিতীয় দিন ১ এপ্রিল লাখের অধিক পর্যটক কক্সবাজার এসে পৌঁছেছেন। সন্ধ্যায় আরও অনেকেই এসে পৌঁছাবেন। ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটকরা আবাসিক হোটেল বুকিং দিয়েছেন। টানা ৫ দিন গড়ে দেড় লাখ করে ৫ দিনে সাড়ে ৭ লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমনে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পর্যটক বাড়লে কিছু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতি হোটেলের কক্ষভাড়ার তালিকা টাঙানো থাকে। পর্যটকেরা তালিকা দেখে কক্ষভাড়া পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া থাকে। অনলাইনেও অধিকাংশ হোটেলের কক্ষভাড়া অগ্রিম বুকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
হোটেল দি স্যান্ডি বিচের মালিক আব্দুর রহমান বলেন, কাঙ্ক্ষিত পর্যটক আসায় খুশি সাগরপাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা। ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটেছে। আর ছুটির দিনগুলোতে অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ থাকায় অসাধু ব্যবসায়িদের কারণে দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই কক্সবাজার পর্যটক উপস্থিতির পরিস্থিতি এবং হোটেল কক্ষ আগাম বুকিং দিয়ে ঘুরতে আসার পরামর্শ তার।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টে কথা হয়েছে ঢাকা থেকে আসা শিক্ষক আবেদিন নাহিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, কক্সবাজারে আসা মানেই আনন্দ। এখানের অথৈ নীল জলরাশি আর শীতল হাওয়ায় মন থেকে ক্লান্তির অবসান হয়ে যায়। ফিরে নিজের কর্মস্থলে সজীবতা পাওয়া যায়।
রাজশাহীর ব্যবসায়ী রফিকুল আনোয়ার জানান, সমুদ্র, পাহাড়, ঝরনা, বৌদ্ধ বিহার আর প্রকৃতিতে কক্সবাজার সত্যি বিমুগ্ধ করে মনকে।
সমুদ্রে গোসল করতে নেমে কোনেসা পর্যটক যেন বিপদাপন্ন পরিস্থিতিতে না পড়েন সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে লাইফগার্ড সদস্যরা। আর গোসলের জন্য পর্যটকদের নির্দেশনা মেনে সাগরে নামার পরামর্শ তাদের। এমনটাই জানিয়েছেন সী সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার ওসমান গনি।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কম হলে লাখ পর্যটক সমুদ্র সৈকতে এসেছেন। যারা বেশিভাগই পানি নেমেছেন স্নান করেছেন।
পর্যটক হয়রানি রোধে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পরিদর্শক মোহাম্মদ সোহেল। তিনি জানান, সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি ঝরনা, ইনানি ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, শহরের বার্মিজ মার্কেট, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এবং রামুর বৌদ্ধ বিহার সহ কক্সবাজারের বিনোদন কেন্দ্রগুলো পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। সবখানেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি জেলা পুলিশের টহলও রয়েছে। বসনো হয়েছে অভিযোগ কেন্দ্র। পর্যটকের কোন অভিযোগ পেলে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন মিলে দ্রুত সমাধন করা হচ্ছে।