× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উৎসব নয়, শোকে ঈদ কাটল শহীদ শাহজাহানের পরিবারের

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:১১ পিএম

ছেলে শহীদ শাহজাহানের ছবি হাতে বাবা আরশ আলী। প্রবা ফটো

ছেলে শহীদ শাহজাহানের ছবি হাতে বাবা আরশ আলী। প্রবা ফটো

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা গণঅভ্যুত্থানে দেড় সহস্রাধিক প্রাণ বিসর্জন দেয়। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের পতনের পর ৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিলে গিয়েও প্রাণ হারান অনেকে। তাদেরই একজন মৌলভীবাজারের শাহজাহান মিয়া।

সিএনজি অটোরিকশা চালক শাহজাহান মিয়া মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৯ নম্বর আমতৈল ইউনিয়নের সনকাঁপন গ্রামের বাসিন্দা হলেও জীবিকার প্রয়োজনে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ধরাতেপুর গ্রামে বসবাস করতেন। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। গত বছরের ঈদে পরিবারের জন্য নতুন পোশাক ও খাবার নিয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনরা। কিন্তু এবারের ঈদে সেই আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে।

গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের খবরে শাহজাহান আনন্দ মিছিলে যোগ দেন। মিছিলটি দক্ষিণ সুরমা থানার ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার পর পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে তিনি নিহত হন। মৃত্যুর সময় তার স্ত্রী ছিলেন সন্তানসম্ভবা। তার মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর ১২ আগস্ট জন্ম নেয় তার কন্যাসন্তান, যে বাবার মুখ দেখার আগেই এতিম হয়ে যায়।

পরিবারের সদস্যরা এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পুরো পরিবার। এবারের ঈদ তাদের জন্য আর উৎসবের নয়, বরং বেদনার প্রতীক হয়ে এসেছে। শাহজাহানের বাবা আরশ আলী বলেন, “আগের ঈদগুলোতে আমাদের পরিবার ছিল আনন্দে ভরপুর। এবার সেই আনন্দ নেই, কেবল কান্না আর শূন্যতা। আমার ছেলে সিলেটে সিএনজি চালিয়ে সংসার চালাতো, ঈদের আগের দিন বাড়ি ফিরতো। এবার সে আর নেই, আমরা তার লাশটাও পাইনি।”

প্রতিবেশীরা জানান, শাহজাহানের অনুপস্থিতিতে তার পরিবার চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আব্দুর রহমান বলেন, শাহজাহান মিয়ার পরিবার এখন অসহায়। তার সাত মাস বয়সী শিশুসন্তান রয়েছে। এলাকাবাসী সাহায্য করার চেষ্টা করছে, তবে সরকারের উচিত এই পরিবারকে সহযোগিতা করা।

পরিবারের একমাত্র চাওয়া—শাহজাহানের হত্যার ন্যায়বিচার।

সরজমিনের শহীদ শাহজাহান মিয়ার ছোট কুটিরে গেলে তার বাবা আরশ আলী মিয়া বলেন, ‘গত বছরের ঈদেও আমাদের পরিবারে ছিল আনন্দ আর আনন্দ। ছিল পরিপূর্ণ একটি পরিবার। কিন্তু আমাদের আনন্দ আর নেই। ছেলে হারানোর সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে ফেলেছি বেঁচে থাকার প্রেরণাও। এবার ঈদের দিনে ছেলের জন্য শুধুই কেদেছি। আমার ছেলে সিলেটে থেকে সিএনজি চালাত। প্রতি সপ্তাহে বা পনের দিনে বাড়িতে এসে পরিবারের খরচ দিয়ে যেত। আর ঈদের আগের দিন আমরা সন্ধ্যা হলেই অপেক্ষায় থাকতাম কখন ছেলে বাড়িতে আসবে, একসাথে সবাই মিলে ঈদ করব। কিন্তু এ বছর ছেলে আমার নেই। বুকটা শুন্য করে দিয়ে গেছে। গত বছর ৫ আগস্টের সরকার পতনের পর সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় পুলিশের গুলিতে আমার ছেলে শহীদ হয়।  এখনো আমরা আমাদের ছেলের লাশ পাইনি। আমরা ভিডিওতে দেখেছি কিভাবে তাকে গুলি করে মারা হয়েছে।’ 

শাহজাহান মিয়ার প্রতিবেশি জাহানারা বেগম জানান, ‘সিলেটে সিএনজি চালিয়ে কোনো রকম সংসার চালাতো সে। প্রতি বছর ঈদের আগের দিন তার মা ও বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন কাপড় কিনে আনতো শাহজাহান। এ বছর ঈদে সেতো এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। শাহজাহান এবারের ঈদে আর নেই। তার পরিবারে কিভাবে ঈদের আনন্দ করবে? তার পরিবারটা কষ্টে রয়েছে। তার ও তার পরিবারের জন্য আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে।’

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৯ নম্বর আমতৈল ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (ইউপি সদস্য) মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘শাহজাহান মিয়ার আয়ের উপরে নির্ভরশীল ছিল তার পরিবার। এবারের ঈদের দিন তার পরিবার কেটেছে সাধারণ অন্যান্য দিনে মতোই। বর্তমানে তার পরিবার অসহায় রয়েছেন। শহীদ শাহজাহানের সাত মাস বয়সি শিশু সন্তানও রয়েছে। আমরা এলাবাসী যতদুর সম্ভব তার পরিবারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। সরকারের কাছে অনুরোধ করবো এই পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা