চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৯:৩৯ পিএম
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৯:৪০ পিএম
প্রতীকী
চট্টগ্রামে এক গার্মেন্টস কর্মীকে হত্যার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইব্রাহীম হাওলারা নামে ওই যুবক নিহত গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে একটি ভাড়া ঘরে থাকতেন। তবে তাদের বিয়ে হয়নি।
ইমোতে পরিচয়ের সুবাদে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চার বছরের শিশুসহ এসে ইব্রাহীমের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর থানা এলাকার কলসিদীঘি পাড়ে সংসার পাতে টুম্পা নামের ওই নারী।
শনিবার (২৯ মার্চ) নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান।
এর আগে ২৬ মার্চ টুম্পার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে ভাড়া বাসার মালিকের কাছে টুম্পা বা তার কথিত স্বামীর কারও নাম ঠিকানা ছিল না, ফলে পুলিশের কাছে এটি ছিল সম্পুর্ণ ক্লুলেস একটি মামলা। তবে শেষ পর্যন্ত তার কথিত স্বামীকে শনাক্ত করে ২৮ মার্চ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার যুবকের নাম ইব্রাহিম হাওলাদার (২৪)। আর খুনের শিকার ওই নারীর নাম টুম্পা আক্তার (২২)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার কুটি ইউনিয়নের কালামুরিয়া গ্রামের লিয়াকত আলীর মেয়ে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় ওয়াসিম চৌধুরী পাড়া পেলাগাজীর বাড়ি আলী সওদাগরের বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় এক অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর পরই ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। বাড়ির মালিকের কাছে ভাড়াটিয়ার তথ্য না থাকায় তাৎক্ষণিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে একই এলাকার একটি দোকানের ক্যাশ মেমো থেকে পাওয়া নম্বর ধরেই এগোয় তদন্ত। এর পরই শনাক্ত হয় ইব্রাহিম; যিনি চট্টগ্রাম থেকে বাগেরহাট যাচ্ছিলেন।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘ইব্রাহিমকে রাজধানীর পোস্তগোলা ব্রিজ এলাকায় বাস থেকে আমরা গ্রেপ্তার করি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি টুম্পা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।’
তাদের মধ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী টুম্পা একজন গার্মেন্টসকর্মী। তার পরিচয় মূলত ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তারের পরই জানতে পারি। তারা বন্দর এলাকার ওই বাসায় লিভ টুগেদার করতেন। কাগজে-কলমে তাদের বিয়ে হয়নি। দুজন ব্যক্তিকে স্বাক্ষী রেখে তাদের মুখে মুখে বিয়ে হয়।’
তাদের ইমোতে পরিচয় উল্লেখ করে এই ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের দুজনের পরিচয় হয়েছে ইমোতে। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। টুম্পা তার আগের সংসারের একটি ছেলে সন্তানসহ চট্টগ্রাম আসেন। এর পর তারা একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন তারা।’
হত্যার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘টুম্পা আক্তার যখন কর্মস্থলে যেতেন ইব্রাহিম মোবাইল নিয়ে যেতে দিতেন না। মোবাইল বাসায় রেখে যেতেন। বাসায় রাখার পর অনেক সময় তার ফোনে পুরুষ কণ্ঠে কল আসতো। ইব্রাহিমের সন্দেহ হয় তার কথিত স্ত্রীর আরও কয়েকজনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে। এই সন্দেহের জেরে তাদের মধ্যে মানসিক দূরত্বের তৈরি হয়।’
হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন ‘ঘটনার দিন এই বিষয় নিয়েই তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে ইব্রাহিমের মাথার কাছে একটি শেলফে থাকা রশি দিয়ে টুম্পার গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। ওই সময় টুম্পার বাচ্চাটি পাশের রুমে ঘুম ছিল। কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটি ঘুম থেকে উঠলে তাকে একজন মহিলার কাছে দিয়ে ইব্রাহিম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ হতাকাণ্ডের ঘটনায় বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।'