ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ, মহেশখালী (কক্সাবাজার)
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৪:৩০ পিএম
সংযোগ সড়কহীন মহেশখালী ঘটিভাঙার দরবেশকাটা সেতু। সম্প্রতি তোলা
পানির বুকে দাঁড়িয়ে আছে এক নিঃসঙ্গ সেতুÑ দুই পাড়ে হাত বাড়িয়ে রেখেও কারও নাগাল পায় না। এপাশ-ওপাশ নেই কোনো পথ, শুধু বাঁশের মই বেয়ে মানুষ ওঠে ও নামে। ১৫ বছর ধরে এভাবেই কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া-ঘটিভাঙার মানুষ পারাপার করছে স্বপ্ন আর কষ্টের সেতু। কবে মিলবে সংযোগ সড়ক, কবে শেষ হবে এ যন্ত্রণা; জানার যেন কেউ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০০৬ সালে উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙা এলাকার দরবেশকাটা খালের ওপর সোনাদিয়া দ্বীপের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি সেতু নির্মাণ করে। একই সময়ে দ্বীপের আরও একটি অংশে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭০ ও ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই দুই সেতু দ্বীপের মানুষদের জন্য আশার আলো দেখালেও পরবর্তী সময়ে সংযোগ সড়কের অভাবে সেগুলো কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে।
২০০৯ সালে দরবেশকাটা সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং ঠিকাদার কাজও শেষ করেন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই জলোচ্ছ্বাসে সড়কটি বিলীন হয়ে যায়। এরপর আর সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা দ্বীপবাসীর চলাচলে চরম ভোগান্তি তৈরি করেছে।
দেশের একমাত্র শৈলদ্বীপ মহেশখালীর অংশ সোনাদিয়া প্রায় ১০ হাজার একর আয়তনের একটি দ্বীপ, যা চিংড়ি, লবণ ও শুঁটকি উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। দ্বীপটি পর্যটনের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দ্বীপের মানুষদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই সেতু। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ঘটিভাঙার মাছ ব্যবসায়ী বাদশাহ মিয়া বলেন, ‘সড়ক নির্মাণে মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার করায় কয়েক মাসের মধ্যেই তা ধসে যায়। ফলে আমাদের উৎপাদিত মাছ ও লবণ পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ পরিবহন ব্যয় অনেক বেশি পড়ে। সোনাদিয়া ও আশপাশের এলাকায় ১০ হাজার একরের বেশি জমিতে লবণ, চিংড়ি ও অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়। শুষ্ক মৌসুমে শুঁটকির উৎপাদনও হয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় এগুলো পরিবহন করতে অনেক কষ্ট হয়।
কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামাল বলেন, সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি করা হলে সোনাদিয়ার হাজারো মানুষের ভোগান্তি কমবে। এটা নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে বার্তা দিয়েছি আমরা।
উপজেলা প্রকৌশলী বনি আমিন জনি বলেন, ‘আগে সেতুর সংযোগ সড়ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বেজার আপত্তিতে তা বাতিল হয়। এখন শোনা যাচ্ছে বেজার আপত্তির কারণও নেই। যদি বন বিভাগ অনুমতি দেয়, তাহলে আমরা সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করব।
দ্বীপের বাসিন্দারা মনে করেন, পর্যটন উন্নয়নের অংশ হিসেবে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে দ্বীপের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তবে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনার ঘোষণা আসেনি।