সাক্ষাৎকার
নাটোর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৪:২০ পিএম
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৪:২১ পিএম
আখতার জাহান সাথী
রানী ভবানী, কাঁচাগোল্লা, বনলতার শহর নাটোর। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার নাটোর জেলা সদরে নানা এলাকার মানুষের সংমিশ্রণ ঘটেছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত নাটোরবাসী। বেশি বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের অভাব ও শিল্পায়নের বিকাশ না ঘটায় উত্তরের অন্যান্য জেলার চাইতে পিছিয়ে আছে নাটোর। সম্প্রতি উত্তরা গণভবন, রাজবাড়ী, ঔষধি গ্রাম প্রসিদ্ধ নাটোর জেলা সদর উপজেলার নানা উন্নয়ন ভাবনা বিষয়ে কথা হয় নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখতার জাহান সাথীর সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের নাটোর প্রতিবেদক কালিদাস রায়
প্রবা : সম্প্রতি নাটোর সদর উপজেলায় আপনার দায়িত্ব পালনের মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হলো। এই এক বছরে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা বা পর্যবেক্ষণ কী?
আখতার জাহান সাথী : গত এক বছরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেটি মনে হয়েছে তা হলোÑ নাটোরের বড় সমস্যা এখানে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব, বেকারত্ব বেশি। এই উপজেলায় কৃষিভিত্তিক বহুমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। কৃষিভিত্তিক এই উপজেলায় শিল্পায়নের ছোঁয়া নেই। উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলা ও উপজেলায় কৃষিভিত্তিক নানা শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে, যেটি নাটোরে কম। এখানকার মানুষের মধ্যে ভিন্ন পেশায় সুইচ করার প্রবণতা কম। নাটোর সদর উপজেলায় কয়েক ধরনের জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে। ভিন্ন জেলা থেকে অনেকে নাটোরে এসে বসবাস করছেন। ফলে বিভিন্ন এলাকার মানুষের সংমিশ্রণ ঘটেছে এখানে। কাজেই এখানে বহুমুখীকরণ কাজের সুযোগ রয়েছে।
প্রবা : দেশের পরিবর্তিত সময়ে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
আখতার জাহান সাথী : সারা দেশে যেভাবে কাজ চলছে আমরাও সেভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। বাড়তি চাপ বলব না, বরং আমরা সমন্বয় করে কাজ করতে অভ্যস্ত। স্টেকহোল্ডারের সংখ্যা বেড়েছে। যেহেতু আইনের ভিতর দিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়, সেহেতু বাড়তি চাপ অনুভব করি না।
প্রবা : আপনার কোন কাজটিকে আপনি বিশেষ কাজের অভিধা দেবেন এবং কেন?
আখতার জাহান সাথী : গ্রাম পুলিশদের নিয়ে এক মাসব্যাপী বিশেষ বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। প্রশিক্ষণে গ্রাম পুলিশদের নানা বিষয়ে আমি নিজেও ট্রেইন করিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে তাৎক্ষণিক নানা ফাইন্ডিংস পর্যবেক্ষণ ও শেয়ারিংয়ে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর কাজ করেছি। প্রাথমিকভাবে প্রযুক্তিগত কাজের অংশ হিসেবে ৭ জনকে স্মার্ট ফোন দিয়েছি। যাতে তারা সহজে বিভিন্ন কার্যক্রম ফাইন্ডআউট করতে পারে এবং সেগুলো তাৎক্ষণিক আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে।
প্রবা : আপনার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে ব্যতিক্রমী কী কী কাজ রয়েছে?
আখতার জাহান সাথী : সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে উপজেলা পরিষদ চত্বরের আবাসিক এলাকার ভিতর একটি নান্দনিক ইউএনও পার্ক তৈরি করেছি। এখানে সেবা নিতে জনসাধারণ মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে পারে। এ ছাড়া উপজেলায় নিরপত্তা ও সোন্দর্যবর্ধনে ১৬টি নান্দনিক আলোকবাতির ব্যবস্থা করেছি। নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত উপজেলা চত্বরের আগে রাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকত। বর্তমানে রাতের বেলা উপজেলা পরিষদ চত্বর আলোকিত থাকে। ইতোমধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। তারুণ্যের উৎসবে ব্যতিক্রমী কাবাডি প্রীতি টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছি। তরুণদের মধ্যে মননশীলতা ও চিন্তাশক্তি বাড়ানোর উদ্দশ্যে দিনব্যাপী দাবা খেলার আয়োজন করি।
প্রবা : মোটাদাগে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
আখতার জাহান সাথী : কাজ করার জন্য এক বছর অনেক কম সময়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গদের মতো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের শনাক্ত করে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে চাই। তেবাড়িয়া হাট এলাকায় পাল পাড়ায় মৃৎশিল্পীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে কারিগরি সহায়তার অংশ হিসেবে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে। ছাতনী এলাকায় চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগর রয়েছে। তাদের দেওয়া চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যে তাদের বৈদ্যুতিক মোটর ও পানির ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে দূরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাইকেল সেড, অভিভাবক সেড, ওয়ার্ড ব্লক ও ছাউনি নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে দুইটি ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়ন বাছাই করে কমিউনিটি ক্লিনিকে কিট সংরক্ষণ করা হবে। এই প্রকল্পে সফল হলে পরবর্তী অর্থবছরে প্রতিটি ইউনিয়নে কিট সরবরাহ করা হবে।
প্রবা : ধন্যবাদ আপনাকে।
আখতার জাহান সাথী : আপনাকে এবং প্রতিদিনের বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ।