মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৩:৩৪ পিএম
শহীদ আবু সাঈদ। ছবি : সংগৃহীত
ঈদের আনন্দ নেই শহীদ আবু সাঈদের পরিবারে। তার স্মৃতিতে ডুবে আছেন পরিবারের সদস্যরা। আবু সাঈদকে ছাড়া রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামের ছোট্ট মাটির বাড়িতে শুধুই শূন্যতা। প্রতিবছরের মতো ঈদ ঘুরে এলেও এবার আবু সাঈদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের ঈদের নামাজ পড়া কিংবা ঈদের দিনে একসঙ্গে খাবার খাওয়া হবে না।
আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ‘ভাইকে ছাড়া এবারই প্রথম ঈদ করতে যাচ্ছি। ভাই বাড়িতে আসত, আনন্দ-উল্লাসে দিন কাটত। কিন্তু এবারের দিন আমাদের দুঃখ-বেদনার, কান্নার। আমার চঞ্চল ভাই বাড়ির আঙ্গিনায় চিরনিন্দ্রায় শায়িত। ভাইয়ের কবর দেখলেই চোখে পানি চলে আসে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর রমজানে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হলে ভাই বাসায় আসত। পরিবারের সবাই মিলে ইফতার করতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবু সাঈদের কিছু বন্ধু ছিল যাদের বাড়ি খালাশপীর। আমাদের তো কারও মোটরসাইকেল ছিল না। আবু সাঈদ বাসায় এসেছে শুনে ওই খালাশপীরের বন্ধুরা মোটরসাইকেলে করে চলে আসত। আমাদের বাসায় খাওয়া-দাওয়া করত। এরপর আবু সাঈদকে মোটরসাইকেলে নিয়ে গ্রামে ঘুরে বেড়াত।’
আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হাসান বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে আবু সাঈদ আমাদের বোনের বাসায় যেত। ভাগ্নি, ভাতিজাদের নিয়ে তার ভালো সময় কাটত। তাদের আদর করত, ঘুরাফিরা করত, কেনাকাটা করত।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে আবু সাঈদ বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলত। তবে ছুটি থাকলেও সে লেখাপড়ায় সময় দিত। কীভাবে লেখাপড়া করছে, আগামীতে কীভাবে করবে এসব নিয়ে বাড়িতে বেশি আলাপ-আলোচনা করত সে। সেই সঙ্গে বাড়িতে কোনো স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কেউ এলে তাকে লেখাপড়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করত। কীভাবে লেখাপড়া করলে ভালো করা যাবে সেই পরামর্শ দিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের সময় নামাজ পড়া হতো বাড়ির পাশে বাবনপুর জামে মসজিদে। আমি, বড় ভাই, বাবা, আবু সাঈদ একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে যেতাম। এখন সেই মসজিদের নাম শহীদ আবু সাঈদ জামে মসজিদ নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ এসেছে।’
আবু হাসান বলেন, ‘আমরা তাকে কিছু খরচ দিতাম। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে সে চলতে পারত না। এজন্য সে রংপুরে টিউশনি করত। টিউশনির টাকা বাঁচিয়ে ভাগ্নি-ভাতিজাদের ঈদের উপহার কিনত।’
আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার হাতের রান্না তার পছন্দের ছিল। ঈদের সময় তার ভাই-বোনদের নিয়ে আনন্দে সময় কাটত। আজ আমার বুকের ধন নেই। একজন মা বোঝে তার সন্তান হারানোর কষ্ট। আমার ছেলেকে আল্লাহ যেন শহীদি মর্যাদা দান করেন।’
আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, ‘আবু সাঈদের জন্য কবরের পাশে বসে শুধু কান্দি, আর আল্লাহর কাছে দোয়া করি। এখন সবাই আমার খোঁজখবর রাখে। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আরও যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সবার জন্য দোয়া করবেন।’
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত বছরের ১৬ জুলাই দুপুরে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবু সাঈদ।