জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবারে ঈদ এবার বিষাদের
রাজু আহমেদ, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৩:৩২ পিএম
শহীদ আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম। ছবি : সংগৃহীত
সাকিব আনজুম ও অপরজন আলী রায়হান জুলাই অভ্যুত্থানের দুই সেনানী। গত ৫ আগস্ট দুপুরে শহীদ হন দুই যুবক। এই শহর থেমে নেই তাদের ছাড়া, তবে তাদের পরিবারের হাসি-আনন্দ নেই। এবার প্রথম এই দুই পরিবার তাদের সন্তান ছাড়া ঈদ করবে। বাবা-মা ও স্বজনরা বুকে পাথর বেঁধে দিন পার করছেন।
গত ৫ আগস্ট দুপুরে রাজশাহী নগরীর আওয়ামী লীগ পার্টি অফিস অভিমুখে ছাত্র-জনতার মিছিল অগ্রসর হলে আলুপট্টি এলাকায় সেটি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ককটেল ও গুলি। এতে আহত হয় শতাধিক মানুষ। এ সময় সাবিক আনজুমকে কুপিয়ে ও কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর আলী রায়হানের মাথায় বিদ্ধ হয় গুলি। ঘটনাস্থলেই মারা যান সাকিব। আলী রায়হান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৮ আগস্ট।
সাকিব কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন না। তবে আলী রায়হান শিবিরের নেতা ছিলেন। মধ্যবিত্ত দুই পরিবারের দুই সন্তান। দুজনেরই বৃদ্ধ বাবার কাঁধে এখনও সংসারের বোঝা। দুজনই বাড়ির বড় সন্তান ছিলেন।
সাকিব আনজুমের বাড়ি রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকায়। স্থানীয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত বছর লেখাপড়া শেষ করে বাবার ব্যবসার হাল ধরেছিলেন। তার বাড়িতে গেলে কথা হয়, মা রোকেয়া খাতুনের সঙ্গে। সাকিবের কথা বলতেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরিবারে তিন সন্তান, তিনজনই ছেলে। সাকিবের স্ত্রী আছে। তাকে সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন সাকিবের বাবা-মা।
মা বলেন, ‘বাড়ির বড় ছেলে সাকিব লেখাপড়া শেষ করে কেবল বাবার সঙ্গে ব্যবসার হাল ধরেছিল। রমজান এলে ইফতার সাজানো, বাড়ির সবাইকে নিয়ে বসা, এসব সে একাই করত। সেহরির সময় সে-ই রান্না করত, সবাইকে ডেকে তুলত। এছাড়া পাড়ার দরিদ্রদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করত। রমজান জুড়ে খুব ব্যস্ত থাকত আমার সাকিব। এর সবই এখন স্মৃতি। ছেলের লাশ তার বাবা কাঁধে নিয়েছে। আমি মা, আমাকে ছেলের কবর দেখতে যেতে হয়। এই কষ্ট বলে বোঝাবার না। যার গেছে সেই বোঝে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমার সন্তানকে কবুল করেন। দোয়া করি পৃথিবীর কোনো মাকে যেন নিজের সন্তানের লাশ দেখতে না হয়। কোনো বাবাকে যেন তার সন্তানের লাশ কাঁধে নিতে না হয়।’
আলী রায়হানের বাড়ি পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মঙ্গলপাড়া গ্রামে। পরিবারের পাশাপাশি গ্রামের মানুষও আলী রায়হানের শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এবার প্রথম তাকে ছাড়াই তার বাবা-মা ও ভাইসহ গ্রামবাসী ঈদ করবে। বাবা মুসলেম উদ্দিন ও মা রুকসানা বেগম কান্নার সাগরে ভেসে দিন পার করছেন। প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা তাদের কান্না থামাতে প্রতিনিয়ত আসছেন বাড়িতে। মুসলেম উদ্দিন-রুকসানা দম্পতির দুই ছেলে। বড় ছেলে রায়হান আলী ওরফে আলী রায়হান এবং ছোট ছেলে রানা ইসলাম। রানা ইসলাম অনার্স পড়েন।
সাকিবের ছোট ভাই রানা বলেন, ‘পড়ালেখার জন্য দীর্ঘ ১০ বছর ভাই বাড়ির বাইরে ছিলেন। তিনি রাজশাহী কলেজে লেখাপড়া করতেন। ছিলেন মহানগর শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক। ছুটিতে, ঈদে বাড়ি আসতেন।’ এবারের ঈদে আলী রায়হান পরিবারের মাঝে নেই। তিনি বলন, ‘ঈদের দিন যত এগিয়ে আসছে বাবা-মা ততই শোকে কাহিল হয়ে পড়ছেন।’ আলী রায়হানকে দাফন করা হয়েছে গ্রামে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে।