× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবারে ঈদ এবার বিষাদের

ঈদ বলে কিছু নেই মুনিরের পরিবারে

মোহন আখন্দ, বগুড়া অফিস

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৩:১৯ পিএম

আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৩:২৬ পিএম

শহীদ মুনিরুল ইসলাম মুনির। ছবি : সংগৃহীত

শহীদ মুনিরুল ইসলাম মুনির। ছবি : সংগৃহীত

সাত মাস পেরিয়েছে কিন্তু ম্লান হয়নি মুনিরুল ইসলাম মুনিরের কবরে জড়িয়ে রাখা জাতীয় পতাকার রঙ। সদ্য পাকা করা কবরের সাদা দেয়ালে পেরেক দিয়ে আটকানো পতাকার লাল-সবুজ রঙ যেন আরও ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছে। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বগুড়ায় কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম শহীদ মুনিরুল ইসলাম মুনির সম্পর্কে জানতে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রায়ই ছুটে যান জেলার কাহালু উপজেলার বীরকেদার গ্রামে। মানুষের ভালোবাসা মুনিরুলের বাবা-মাকে মুগ্ধ করলেও এবারের রমজান আর ঈদ যেন নিষ্ঠুর বাস্তবতা হয়ে তাদের সামনে হাজির হয়েছে। মুনিরুল ছাড়া রমজানে সেহরি ও ইফতারগুলো জৌলুসহীন হয়ে পড়েছে। ঈদ ঘিরেও নেই কোনো প্রস্তুতি।

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সকালে বাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ২৩ বছরের মুনিরুল ইসলাম মুনির। নওগাঁর বদলগাছী ‘বঙ্গবন্ধু সরকারি মহাবিদ্যালয়’-এর অর্থনীতির ছাত্র মুনিরুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আন্দোলনে মনিরুলের একমাত্র ছোট বোন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী ছাত্রী নাফিসা খাতুনও অংশ নেন। সরকারিভাবে প্রণীত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের গেজেটে মুনিরুল ইসলামের নাম স্থান পেয়েছে ৩৯ নম্বর ক্রমিকে। জুলাই অভ্যুত্থানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বগুড়ার ১৯ জন নিহত হন। 

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বীরকেদার গ্রামে মুনিরুলের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার বাবা শামছুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মায়ের হাতের তৈরি খাবার ছাড়া মুনিরুল ইফতার করত না। এবার সে নেই। তাই ইফতারির আয়োজনও একেবারে সাদামাটা। পানি আর ভাত-তরকারি ছাড়া ইফতারে আর কিছুই থাকে না।’ ঈদের কেনাকাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে তার চোখ দুটি ছলছল করে ওঠে। কিছু সময় নিশ্চুপ থেকে বলে, ‘আল্লাহ্ আমাকে সচ্ছলতা দিয়েছেন। কিন্তু কিছু কিনতে মন চায় না। ওর (মনিরুল) গত বছরের কেনা পাঞ্জাবি এবং চটি স্যান্ডেল এখনও আছে। সেগুলোই বারবার দেখি। ও নেই, আমাদের আনন্দও নেই।’ 

ছোট বোন নাফিসা খাতুন বলেন, ‘ভাইয়া সব সময় অসহায় এবং গরিব মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করত। গত বছরও নিজের জমানো টাকা এবং বন্ধুদের কাছ সংগ্রহ করা টাকায় তাদের সংগঠন হিকমা ইয়ুথ সোসাইটি থেকে ঈদের আগে গরিবদের মাঝে চাল, সেমাই ও চিনি বিতরণ করেছিল। ভাইয়ার অবর্তমানে ওই সংগঠনটির সদস্যরা এবারও এসব বিতরণ করেছে। এগুলোই এখন আমাদের আনন্দ। নিজের জন্য কোনোকিছু কিনতে মন চায় না। বাড়িতে ভাইয়া নেই, আমাদের নিজেদের কোনো আনন্দও আর নেই।’

ছেলে ছাড়া ঈদের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়েন মোর্শেদা খাতুন। বলেন, ‘ও আমার চোখের মণি ছিল। কোনো কারণে যদি আমার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি পড়ত তাহলে ওর চোখ দিয়ে পড়ত দুই ফোঁটা। আমার মুনিরুল নেই। প্রতি মুহূর্তে ওর কথা মনে পড়ে।’ 

ঈদের আনন্দ নেই শহীদ কলেজ শিক্ষক সেলিম হোসেনের পরিবারেও। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা সংলগ্ন ডাকবাংলো এলাকায় নিহত সেলিম হোসেনের বিধবা স্ত্রী এবং ২ বছরের সন্তান এখনও ঈদের কেনাকাটা করেনি। জানতে চাইলে, সেলিম হোসেনের ছোট ভাই উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘বাবা-মা ও তিন ভাইসহ আমাদের যৌথ পরিবার। মুদি দোকানি বাবার আয় আর বড় ভাইয়ের (সেলিম) টাকায় চলত আমাদের সংসার। কিন্তু ভাই শহীদ হওয়ার পর এখন শুধু বাবার মুদি দোকানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমাদের ঈদ বলে কিছু নেই। নেই কোনো আনন্দও।’

মুনিরুলের হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে তার বাবা শামছুল হক বলেন, ‘পুলিশই মুনিরুলকে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই এবং বিচার চলাকালে যাতে আসামিরা জামিনে বেরোতে না পারে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।’ তবে এখনও মামলা না করার কারণ জানতে চাইলে শামছুল হক বলেন, ‘মামলা করলে ছেলের লাশ উত্তোলন করা হতে পারে। আমি এটা চাই না।’ শামছুল হক আরও বলেন, ‘মামলার জন্য আমি আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি ফরেনসিক পরীক্ষা ছাড়াই বিচার দাবি করে বলেন, ‘আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে, সেটি দেখেই ন্যায়বিচার করা সম্ভব।’ তার মতোই ন্যায়বিচার চান শহীদ কলেজ শিক্ষক সেলিম হোসেনের ভাই উজ্জ্বল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা