নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৫ ১৫:৪৫ পিএম
সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনার মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রবা ফটো
বরিশালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনার মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) রাতে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ বাদী হয়ে মামালাটি দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি জানান, সাংবাদিকরা কোনো দলের নয়, তারা তাদের কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। সেই কাজে বাধা দেওয়া, সাংবদিকদের মারধর করা এবং তাদের মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া, ক্যামেরা-মোবাইল ভাঙচুর করার মতো সন্ত্রাসী কার্যক্রম কেউ করে পার পেয়ে যাবে সেটাও ঠিক নয়। তাই আমরা আইনগতভাবে যেমন বিষয়টি দেখেছি, তেমনি সন্ত্রাসীর বিচারও বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে দাবি করেছি।
তিনি বলেন, মামলায় ছাত্রদল নেতা সোহেল রাঢ়িসহ ১৩ জনের নামে ও ১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমনা জানান, সাংবাদিক খালিদ সাইফুল্লাহ রাতে একটি লিখিত এজাহার দিয়ে গেয়েছেন, সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এ মামলায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলেও জানান তিনি।
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের দায় দল নিবে না বলে জানিয়েছেন বরিশালের বিএনপি নেতারা।
পাশাপাশি তারা বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত দুই সাংবাদিকের খোঁজ খবরও নিচ্ছেন। এই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন স্থানীয় একটি দৈনিকের ফটো সাংবাদিক নুরুল আমিন রাসেল ও মনিরুজ্জামানকে দেখতে যান বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট আবুল কালাম শাহিন, সদস্য এডভোকেট কাজী এনায়েত হোসেন বাচ্চু ও নুরুল আমিন প্রমুখ।
এ সময় তারা আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন এবং বলেন, সাংবাদিকরা কোনো দলের হলে তাদের পাশে এসে আমরা দাঁড়াতাম না। আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার রয়েছি। কারও ব্যক্তিগত ঝামেলার দায় দল নিবে না। আর দলের নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ কোনো অন্যায় করে তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরিশালের ঘটনা এরই মধ্যে কেন্দ্র অবগত রয়েছেন, তারাই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। তবে আপনারা (সাংবাদিকরা) গোটা দলকে দোষী করবেন না এটা আমাদের প্রত্যাশা। কারণ বিএনপি কখনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবে না।
এদিকে ঘটনার পরপরই বরিশাল মহানগর বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। সেইসঙ্গে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি এক বিবৃতিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকের ওপর হামলা ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিবৃতিতে তিনি বলেন- সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই, হামলাকারীরা ছাত্রদলের কেউ হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বিবৃতিতে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
অপরদিকে আদালত প্রাঙ্গণে দিন দুপুরে মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে নাশকতা সৃষ্টির মতো ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে সাংবাদিক মহল।
বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, সাংবাদিকরা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মূখীন হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আদালত প্রাঙ্গণে ও তার সামনে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সত্যিই উদ্বেগজনক। দিন দুপুরে এ ধরনের ঘটনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতির বিষয়টি দেখিয়ে দিয়েছে ছাত্রদলের ওই সকল নেতারা। পাশাপাশি আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। পুলিশের সামনে এ ঘটনা ঘটিয়ে সন্ত্রাসের জানান দিল হামলাকারীরা। পুলিশ এর দায় এড়াতে পারে না। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি যে সকল পুলিশ সদস্যের সামনে এমন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, বৃহষ্পতিবার দুপুরে বরিশাল জেলা ও দায়েরা জজ আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে গেলে জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ীর নেতৃত্বে ১২-১৫ জন স্থানীয় দৈনিকের ফটো সাংবাদিক এন আমিন রাসেল ও মনিরুজ্জামানের ওপর হামলা চালানো হয়। তাদের মারধরসহ, ক্যামেরা, দুটি মোবাইল ভাঙচুর করা এবং নগদ টাকা পয়সা লুটে নেয় হামলাকারীরা। পাশাপাশি আদালতের প্রধান ফটকেই সাংবাদিকদের একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর আদালতের নিরাপত্তার পাশাপাশি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রশ্ন ওঠে।