ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) ও গাজীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৫ ১২:১৬ পিএম
উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের চাপ বাড়লেও যানজট দেখা যায়নি কোথাও। বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক। প্রবা ফটো
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষজন। ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও অতিরিক্ত যানজটের কোনো লক্ষণ নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যানবাহনের চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়েছে। তবে যানজট দেখা যায়নি কোথাও।
ফাইভ স্টার পরিবহনের দিনাজপুরগামী যাত্রী মো. রহিম মণ্ডল বলেন, আমি বহুবার এই পথ দিয়ে গিয়েছি। এখানে এলাঙ্গা-যমুনা সেতু পর্যন্ত এমনই গাড়ি চলত না, অনেকক্ষণ যানজট আটকে থাকতে হতো। এবার তা থাকতে হচ্ছে না। এতে করে অনেক দ্রুত বাড়িতে পৌঁছাতে পারব।
তবে কিছু যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন। এসআই পরিবহনের যাত্রী শাকিল ও রহমান শেখ বলেন, ৫০ টাকার ভাড়া ১০০-১২০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। ২০০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যমুনা সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার ৭৬৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৮ হাজার ২৩৯টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা।
সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল বলেন, যমুনা সেতুর দুই পাশে মোট ১৮টি বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। বিশেষভাবে মোটরসাইকেলের জন্য দুটি বুথ রয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, মহাসড়কে কিছুটা যানজট হবে, তবে মহাসড়কে যানজট নিরসনে পুলিশের সঙ্গে এবারও আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবেন।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, সাড়ে ৭০০ পুলিশ মহাসড়ককে চারটি সেক্টরে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন।
মহাসড়কে যাত্রীর ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়
গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। একই সঙ্গে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে। এই দুই মহাসড়কের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা চন্দ্রা চৌরাস্তা ও চন্দ্রা স্টেশন। সেখানে উপচে পড়া যাত্রীরা বলছেন, বাড়ি ফেরার আনন্দে অতিরিক্ত ভাড়া মেনে নিয়েই বাড়িতে যাচ্ছেন তারা।
শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে ২ হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কলকারখানা। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫৪টি পোশাক কারখানা। গতকাল বৃহস্পতিবার গাজীপুরের অনেক কারখানা ছুটি হয়েছে। এরপর থেকেই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। চাপ বাড়লেও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় যাত্রীদের ভিড়। তবে কোথাও কোনো যানজট পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ করতে জেলা, মহানগর ও ট্রাফিক বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
পরিবহন মালিক ও শিল্পকারখানা সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কিছু কারখানা শুক্রবার এবং বাকিগুলো শনিবার দুপুরের মধ্যে ছুটি হবে। ফলে মহাসড়কে যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে।
চন্দ্রা এলাকার যাত্রী নারগিস আক্তার বলেন, বগুড়ায় যাওয়ার জন্য সকাল ৭টা থেকে অপেক্ষা করছি। অনেক গাড়ি থাকলেও ভাড়া বেশি চাইছে।
বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের সহকারী মমিন বলেন, ঈদের সময় যাত্রী বেশি থাকে, যানজট থাকে। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক সময় থেকে ভাড়া তুলনামূলক বেশি হয়।
এ বিষয়ে নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ওসি রইচ উদ্দিন বলেন, বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন। অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে যানজট নিরসনে মহাসড়ক দখলমুক্ত রাখা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধসহ সার্বিক নিরাপত্তায় জিএমপি সদস্যরা নিয়মিত কাজ করছেন। এ ছাড়া পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক দলও সহায়তা করছে। ছিনতাই প্রতিরোধে সাদা পোশাকে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা।