চট্টগ্রাম বন্দর
হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৫ ১২:০১ পিএম
চট্টগ্রাম বন্দর। প্রবা ফটো
পুরোনো জাহাজ কিনে বিপাকে পড়েছে এক জাহাজ আমদানিকারক। এমভি ব্ল্যাক পার্ল নামের একটি জাহাজ ২০১৯ সালের জুলাই মাসে আমদানির পর দীর্ঘ ৫ বছর বসিয়ে রেখেও খালাস নিতে পারছে না আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। কাস্টমসের বাধায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর জাহাজটি ডুবে গেছে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্ণফুলী চ্যানেলে। গত ২৩ মার্চ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের কর্ণফুলী চ্যানেলে ডুবে যায় বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ওই চ্যানেলে জাহাজ চলাচল নিরাপদ রাখতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজটি সরিয়ে নিতে শিপিং এজেন্টকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি। শিপিং এজেন্ট জানিয়েছে, জাহাজটি আমদানির পর তারা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দিয়েছে এখন এটি উত্তোলনের দায়ভার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের।
শিপিং এজেন্ট মেসার্স মিডইস্ট শিপিং সার্ভিস’র মালিক জয়নাল আবেদিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, শিপিং এজেন্ট হিসেবে আমরা জাহাজটি বাংলাদেশে নিয়ে আসার কাজ করেছি। দেশে আসার পর আমরা জাহাজটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কাস্টমস হাউস এটির খালাস আটকে দেওয়ায় জাহাজটি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তাই বন্দরের কাছে আমাদের নাম উল্লেখ আছে। আমরা যেহেতু জাহাজটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছি তাই এখন এর দায়ভার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের। আর যেহেতু জাহাজটির খালাস প্রক্রিয়া আটকে আছে, তাই এটি এখনও কাস্টমস হাউসের জিম্মায়।
অভ্যন্তরীণ নৌরুটে চলাচলের জন্য ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এমভি ব্ল্যাক পার্ল নামের একটি জাহাজ আমদানি করে বিগ ওয়ান (বিডি) লিমিটেড। কিন্তু ১৯৬৬ সালে নির্মিত হওয়ায় জাহাজটির খালাস আটকে দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। এরপর কাস্টমস হাউসের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। আমদানিকারকের রিটের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে কাস্টমস হাউস। এতে আটকে যায় জাহাজটির খালাস প্রক্রিয়া। এরপর দীর্ঘদিন জাহাজটি পড়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরের তিন নম্বর বয়াতে। দীর্ঘদিন সেখানে অলস বসে থাকা অবস্থায় গত ২৩ মার্চ জাহাজটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় শিপিং এজেন্টকে চিঠি পাঠিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজটি সেলভেজ (উত্তোলন) করার নির্দেশনা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ সংরক্ষক মো. ফরিদুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর আমরা শিপিং এজেন্ট মেসার্স মিড ইস্ট শিপিং সার্ভিসেসকে চিঠি দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজটি সেলভেজ (উত্তোলন) করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। এখনও ৪৮ ঘণ্টা পার হয়নি। এর পাশাপাশি এমভি ব্ল্যাক পার্ল জাহাজটি ডুবে যাওয়ার বিষয় অবহিত করে আমরা কর্ণফুলী চ্যানেলে চলাচলকারী সকল জাহাজকে ওই স্থান এড়িয়ে যেতে বলেছি।
শিপিং এজেন্ট মেসার্স মিড ইস্ট শিপিং সার্ভিস জাহাজটি তাদের অধীনে নেই জানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ফরিদুল আলম বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জাহাজটির যেসব কাগজপত্র আছে তাতে জাহাজটি শিপিং এজেন্ট মেসার্স মিড ইস্ট শিপিং সার্ভিসেস অধীনেই আছে। তাই আমরা তাদেরকে চিঠি দিয়েছি। তারা যদি ডুবে যাওয়া জাহাজটি সেলভেজ করতে অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে আমরা বন্দর আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব। নিয়ম অনুযায়ী, জাহাজ চলাচল রাখতে বন্দর কর্তৃপক্ষ এটি সেলভেজ করবে। এরপর জাহাজটি নিলামে বিক্রির মাধ্যমে উত্তোলন খরচ নির্বাহ করবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শিপিং এজেন্টকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে গত ২৩ মার্চ আনুমানিক ৫টা ৪০ মিনিটে আপনাদের এজেন্সির অধীন থাইল্যান্ডের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি ব্ল্যাক পার্ল কর্ণফুলী চ্যানেলে শাহ আমানত ব্রিজের উজানে বাকলিয়ার চর এলাকায় নিমজ্জিত হয়। জাহাজটির বর্তমান অবস্থান কর্ণফুলী চ্যানেলে সকল অভ্যন্তরীণ জলযানের নিরাপদ নেভিগেশনের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। নিরাপদ নৌ-চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য জাহাজটির নিমজ্জিত স্থানে লাল মার্কিং বয়া বসানো হয়েছে। এই অবস্থায় পত্র প্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে নিমজ্জিত জাহাজটি সেলভেজ করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা যাচ্ছে। অন্যথায় পোর্ট অ্যাক্ট ১৯০৮ ধারা ৩৩, ৪৩, চবক আইন , ধারা ১০ (জ), ১০ (ম) , ১১ (গ), ২১ এবং সেলভেজ কনভেনশন ১৯৮৯ ধারা ৮, ১২ ও ২০ মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চিঠি পাওয়ার পর পাল্টা চিঠি দিয়ে ডুবে যাওয়া জাহাজটির দায়দায়িত্ব তাদের না বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্ট মেসার্স মিড ইস্ট শিপিং সার্ভিসেস। বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ সংরক্ষক বরাবর, পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়Ñ এমভি ব্ল্যাক পার্ল জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তালিকাভুক্ত শিপিং এজেন্ট মিড ইস্ট শিপিং সার্ভিসের অধীনে ডিক্লারেশন করা হয় পরবর্তীতে জাহাজটির যাবতীয় ডকুমেন্টারি কার্যাদি সম্পাদন করে জাহাজের আমাদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিগ ওয়ান (বিডি) লিমিটেডের নিকট জাহাজটি হস্তান্তর করা হয়। জাহাজটি রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার কারণে বিগত কয়েক মাস থেকে উক্ত জাহাজ বন্দরের ৩ নম্বর বয়াতে অলস পড়ে ছিল। জাহাজটির আমদানিকারক বিগ ওয়ান (বিডি) লিমিটেডের সঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষের ডকুমেন্টারি জটিলতার কারণে উচ্চ আদালতে মামলা হয়। বর্তমানে উক্ত জাহাজটি নিয়ে উচ্চ আদালতে দায়ের করা মামলা চলমান রয়েছে। যেহেতু জাহাজটি একটি আমদানিকৃত পণ্য এবং কাস্টমস হাউস জাহাজটি বাজেয়াপ্ত করে অকশন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, শিপিং এজেন্ট অনেক আগে আমদানিকারকের নিকট হস্তান্তর করেছে। সেহেতু বিষয়টি কাস্টম হাউসের এখতিয়ারভুক্ত সমস্যা বিধায় বর্তমানে জাহাজটি কাস্টমস হাউস অথবা আমদানিকারকের জিম্মায় থাকার কথা। তাই উক্ত জাহাজের যাবতীয় সমস্যা ও অপরাপর তথ্যাবলির ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস অথবা জাহাজটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিনীত অনুরোধ করা হলো।