রেজাউল করিম, গাজীপুর
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৫ ১১:০৮ এএম
গাজীপুর জেলা কারাগারের একজন রক্ষীকে দর্শনার্থীর কাছ থেকে টাকা নিতে দেখা যাচ্ছে। সংগৃহীত
গাজীপুর জেলা কারাগারে বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেই গুনতে হচ্ছে ঘুষ। অভিযোগ উঠেছে ডিও (ডিমান্ড অর্ডার) ছাড়া ১৫ দিনের আগে স্বজনদের দেখা করতে হলে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। একাধিক ভুক্তভোগী এবং একটি গোপন ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কারারক্ষী আতিক ও কামাল বন্দিদের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন।
প্রতিবেদকের হাতে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কারারক্ষী আতিক দর্শনার্থীদের কাছে টাকা চাইছেন। এরপর আরেক কারারক্ষী কামাল তাদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা আদায় করছেন। অভিযোগ রয়েছে, এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এবং কেউ মুখ খুললেই হয়রানির শিকার হতে হয়।
সূত্র থেকে জানা যায়, কারাগারের ডিভিশন ওয়ার্ডে থাকার জন্য প্রতিটা বন্দির কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। ডিভিশন ওয়ার্ডে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে একসঙ্গে রাখা হয়। এ ছাড়া মোবাইল ফোন বাণিজ্যে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অভ্যন্তরের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কারারক্ষী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন্দি, যিনি সম্প্রতি গাজীপুর জেলা কারাগারে ছিলেন, তিনি বলেন, কারাগারে সরকারি খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। অনেক সময় এমন খাবার দেওয়া হয়, যা খাওয়া অসম্ভব। কিন্তু যদি টাকা দেওয়া হয়, তাহলে ভালো মানের খাবারও পাওয়া যায়। বন্দিদের টাকা লেনদেনের জন্য গোপনে বিকাশ ব্যবস্থাও চালু রয়েছে। তবে এর জন্য কারারক্ষীদের প্রতি ১,০০০ টাকায় ২০০ টাকা কমিশন দিতে হয়। আর যারা বেশি টাকা খরচ করতে পারেন, তারা ভিআইপি সুবিধা পান, ভালো বিছানা, ভালো খাবার, বিশেষ সুবিধা সবই মেলে টাকা দিলেই।
গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি পাঠান আজহার, যিনি রাজনৈতিক মামলায় গাজীপুর জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন এবং পরবর্তীতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত হন, তিনি বলেন, আমার পরিবারের সদস্যরা যখন দেখা করতে আসত, তখন বারবার টাকা দিতে হতো। টাকা না দিলে নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেওয়া হতো। এমনকি কিছু সময় অপেক্ষার নামে হয়রানি করা হতো, আর পরে বলত আজ দেখা করা সম্ভব নয়। যারা টাকা দিতে পারত, তারাই দ্রুত দেখা করত।
গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের বলেন, কোনো দর্শনার্থী হয়রানির শিকার হলে অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। আমি দপ্তর প্রধান হিসেবে এ ধরনের অন্যায়, অনিয়মের আইনানুগ প্রতিকার করব। দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।