চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৫ ২৩:৩৭ পিএম
প্রবা ফটো
শেখ হাসিনা যেভাবে নিজের মতো করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার যে বিভিন্ন প্রক্রিয়া করতো; এখন মনে হয় কিছু কিছু মানুষের মনে সেই আকাঙ্খা জেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সেই আকাঙ্খা হাসিনা একভাবে পূরণ করেছে, এরা আরেকভাবে পূরণ করতে চাচ্ছে। এরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। এরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। এরা বাংলাদেশের মানুষের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। এরা বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে।’
শনিবার (২২ মার্চ) বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ইফতার উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনার জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, মালিকানা ফিরে পাবার যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা শেখ হাসিনা যেভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে, এখন আবার আরেকটি শক্তি অন্যভাবে সেটা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে নির্বাচন না হতে পারলে বোধহয় তারা খুব খুশি।’
দেশে এনার্কি (নৈরাজ্য) সৃষ্টি করার একটি প্রক্রিয়া চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অর্থাৎ এনার্কি সৃষ্টি করে যদি নির্বাচনটা বন্ধ করা যায়। এনার্কি সৃষ্টির কারণে যাতে গণতান্ত্রিক অর্ডারে আমরা ফিরে যেতে না পারি। যেজন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা লড়েছি এতো বছর, সেই একই প্রক্রিয়া আর চলতে দেওয়া যায় না। বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চিতভাবে এই প্রক্রিয়াকে রোধ করবে। তারা তাদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে, তাদের গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক, সাংবিধানিক অধিকারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবে, যারা তাদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে দৈনন্দিন ভিত্তিতে, এটার অপেক্ষায় জনগণ আছে।’
বিএনপির এই শীর্ষ স্থানীয় নেতা বলেন, আর কোনো প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনার মতো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দেওয়া, বাধাগ্রস্ত করা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, আইনের শাসনকে বাধাগ্রস্ত করা, বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক, সাংবিধানিক অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করা, যারা নামবে তাদের এটার জন্য দায় নিতে হবে। এই দায় তাদের নিতেই হবে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা সঠিক সিদ্ধান্তে ফিরে আসবে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য মঙ্গল, দেশের জন্য মঙ্গল, তাদের নিজেদের জন্যও মঙ্গল।
তিনি বলেন, আমরা যদি সত্যিকারের নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই, তাহলে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে হবে। আমরা আন্দোলন করেছি ১৬ বছর কি জন্য? বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার মূল বাহক হচ্ছে নির্বাচন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাবার জন্য মূল বাহক হচ্ছে একটি নির্বাচিত সরকার, একটি নির্বাচিত সংসদ। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা, যে মনোবাসনা জেগেছে, সেটা পূরণের পন্থা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক অর্ডারে গিয়ে একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের কথা আমরা বলছি, সেই পরিবর্তনটা সংসদে নিয়ে আসা। এই পরিবর্তন করার জন্য আর দ্বিতীয় কোনো পন্থা নেই।
বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যাদের রাজনৈতিক কোনো মতাদর্শ নেই, যাদের রাজনীতি দৈন্য হয়ে গেছে, তারা এ ধরনের কথা বাজারে এনে বিএনপির জনপ্রিয়তাকে ক্ষতি করতে চাচ্ছে। যে দল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শেখ হাসিনার হাতে, যে দল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফ্যাসিস্টের হাতে, যে দলের ৬০-৭০ লাখ নেতাকর্মী মিথ্যা মামলার সম্মুখীন, যে দলের হাজার-হাজার নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছে, যে দলের নেতাকর্মীরা পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছে, যে দলের নেতাকর্মীরা জেলে চিকিৎসার অভাবে কষ্টভোগ করেছে, বেগম জিয়াসহ, আমিসহ, কেউ যদি বলে আমরা তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি, তাহলে তাদের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই, তারা নতুন নতুন ধারণা, নতুন নতুন বয়ান বাজারে ছেড়ে চেষ্টা করছে বিএনপির জনপ্রিয়তার ক্ষতি করার জন্য। তাদের আর কোনো রাজনৈতিক বয়ান নেই।
তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, বিএনপির মতো ক্ষতিগ্রস্ত, আমার মতো ক্ষতিগ্রস্ত তাদের মধ্যে কয়জন আছে? আমি যতবার জেলে গেছি, আমার ওপর যত নির্যাতন হয়েছে, আমার পরিবারের ওপর যত নির্যাতন হয়েছে, যারা বলছে, তাদের কি এর এক শতাংশ হয়েছে? তারেক রহমান সাহেব পরিষ্কার করে বলেছেন, আমরা কোনো প্রতিশোধের, প্রতিহিংসার রাজনীতি বাংলাদেশে করব না কিন্তু বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের, যারা দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন, গুম-খুন, মিথ্যা মামলায় হয়রানি করেছে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, প্রত্যেকের বিচার করতে হবে। সেটা এখন হচ্ছে কিনা আমার সন্দেহ আছে, তবে বিএনপি এলে সেই কাজটা আমরা পরিপূর্ণভাবে করব।
আমীর খসরু বলেন, একটা দেশের প্রশাসন পুলিশ আর সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে চলে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার যখন আসে, এই ফাউন্ডেশনের ওপর ভিত্তি করে পুলিশ-প্রশাসন তার দায়িত্ব পালন করে। এখন বাংলাদেশে যেসব সমস্যা দেখতে পাচ্ছি, যেহেতু বাংলাদেশে কোনো নির্বাচিত সরকার নেই, এজন্য কোনো ফাউন্ডেশনও নেই, পলিটিক্যাল মোবিলাইজেশন নেই, এজন্য সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে। নির্বাচনের মূল শক্তি হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনের মূল শক্তি হচ্ছে জনগণ। পুলিশ ও প্রশাসন সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের মানুষ প্রস্তুত একটি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, নতুন প্রজন্ম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। পুলিশ কিংবা প্রশাসন হচ্ছে সহায়ক শক্তি, এটা মাথায় রাখতে হবে। পুলিশ একা কোনোদিন কোনো নির্বাচন সফল করতে পারে না, প্রশাসন পারে না। দেশের মানুষসহ সবাই মিলে নির্বাচন সফল করতে হয়। এজন্য বাংলাদেশের মানুষ প্রস্তুত আছে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় নগর কমিটির সাবেক সভাপতি ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শামছুল আলম, নগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদসহ নগর বিএনপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন।