ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৫ ১৪:১৩ পিএম
সংস্কারের অভাবে মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফরমের ইট দেখা যাচ্ছে। প্রবা ফটো
শতবর্ষী শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন। ব্রিটিশ আমলে তৈরি হয় এটি। স্টেশনটি শ্রীমঙ্গল উপজেলা ও মৌলভীবাজার জেলা সদরের রেলযাত্রীদের একমাত্র অবলম্বন। এটি এখন জরাজীর্ণ। এতে রয়েছে লোকবল সংকট। যাত্রীদের বসার সুব্যবস্থা নেই। গণশৌচাগারের সংকট নিয়ে ধুঁকছে স্টেশনটি। এক সময় চা শিল্প সমৃদ্ধ উপজেলা, পর্যটন নগরী ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে শ্রীমঙ্গলের রেলস্টেশনটি নজর কেড়ে ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর যে অবস্থা তাতে রেলযাত্রীরা ন্যূনতম সেবাও পাচ্ছে না।
এ স্টেশন স্থাপিত হয় ১১৩ বছর আগে ১৯১২ সালে। এটি প্রথম শ্রেণির রেলস্টেশন। ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চলে উৎপাদিত চা ও অন্যান্য পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানোর ক্ষেত্রে স্টেশনটির অনেক ভূমিকা ছিল। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে যাত্রী সংখ্যা বাড়তে থাকে। যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য চালু করা হয় মেইল ট্রেন। আশির দশকে ঢাকা-সিলেট, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে যুক্ত হয় বিলাসবহুল যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেন। ফলে এ স্টেশনটির বাণিজ্যিক মান ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। সাধারণ যাত্রীরা পায় নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের নিশ্চয়তা। তবে ট্রেন বাড়লেও সেসময়ে বাড়েনি যাত্রীসেবার মান। রেলস্টেশনটির উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০০৪ সালে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের একক চেষ্টায় স্টেশনটির পুরাতন ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরি করা হয়। ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার উপস্থিতিতে নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন এম সাইফুর রহমান।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনটির প্ল্যাটফর্ম ও স্টেশন ইয়ার্ডে ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে। মৌসুমি ফল বিক্রেতা থেকে শুরু করে নানা পণ্যের বাজার যেন চারপাশ। রয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। গুদাম জরাজীর্ণ থাকায় প্ল্যাটফর্মের ওপরই ফেলে রাখা হয় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিভিন্ন ধরনের মালামাল। ট্রেন আসা-যাওয়ার সময়ে স্টেশনটির মূল ভবনের সামনে যাত্রীদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। ওই সময়ে যত্রতত্র পার্কিংয়ে স্টেশন এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অতি সম্প্রতি স্টেশনটির প্ল্যাটফর্ম উঁচু করার জন্য কাজ শুরু হলেও অর্ধেক কাজ হওয়ার পর অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।
শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন সূত্র জানায়, ‘এ গ্রেডের’ এই রেলওয়ে স্টেশনটির লোকবল সংকট প্রকট। ছয়জন সহকারী স্টেশন মাস্টার পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন তিনজন, ছয়জন বুকিং সহকারীর পদের বিপরীতে আছেন চারজন, তিনজন আয়া পদের বিপরীতে একজনও নেই।
শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার শিপলু সূত্রধর বলেন, ‘স্টেশনটির সার্বিক সমস্যাগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
স্টেশনমাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘স্বল্পসংখ্যক লোকবল নিয়ে আমরা যাত্রীদের সেবা করার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। স্টেশনের সার্বিক সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এর সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ আন্তরিক। সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।’