আবদুল্লাহ আল-মামুন, ফেনী
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৫ ১৩:০৭ পিএম
বালু উত্তোলনের প্রভাবে ফেনীর মুহুরী-কহুয়া নদীতে সৃষ্টি হয়েছে নাব্যতা সংকট। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
বালু উত্তোলনের প্রভাবে ফেনীর মুহুরী-কহুয়া নদীতে সৃষ্টি হয়েছে নাব্যতা সংকট। পরশুরাম-ফুলগাজী উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ছে। সেচের জন্য পানি না থাকায় পরশুরাম-ফুলগাজী উপজেলার ৩০টি সেচ স্কিম বন্ধ রয়েছে। ফলে জমিতে সেচ দিতে না পারায় চলতি মৌসুমে দুই উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করা যাচ্ছে না বলে এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মুহুরী-কহুয়া নদীতে কৃষকরা অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে ৫০টি সেচ পাম্পের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিয়ে থাকেন। তবে বালুখেকোরা বালু উত্তোলনের জন্য কৃষকদের এ বাঁধ কেটে দেওয়ায় কহুয়া নদীতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। এছাড়া পরশুরাম উত্তর পাচারের খোন্দকিয়া সংলগ্ন ব্রিজের নিচে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় নদী ভরাট হয়ে পড়েছে। ফলে কহুয়া নদীর ওই স্থানে পানি আটকে আছে।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীতে সেচের পানি না থাকায় পরশুরাম পৌর এলাকার উত্তর ও দক্ষিণ কোলাপাড়া, বাঁশপদুয়া, খোন্দকিয়া, বাউরখুমা, বাউরপাথর, বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের টেটেশ্বর, দক্ষিণ টেটেশ্বর, চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সাতকুচিয়া, চিথলিয়া, রাজষপুর, শালধর, ধনিকুন্ডা, মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্ব সাহেব নগর, কালিকৃষ্ণ নগর, মেলাঘর, কালিকাপুর, ফুলগাজীর পশ্চিম ঘনিয়ামোড়া, পূর্ব ঘনিয়া মোড়া, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, উত্তর টেটেশ্বর, দক্ষিণ টেটেশ্বর, বৈরাগপুর, কিসমত টেটেশ্বরসহ প্রায় ৩০টি গ্রামে বোরো আবাদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে কৃষকরা অভিযোগ করছেন, পৌর এলাকার বেড়াবাড়িয়ার রাবার ড্যামটি কৃষকের কোনো কাজে আসছে না। সেটি গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাবার ড্যামের কারণেও কহুয়া নদীতে পানি প্রবাহিত হতে পারছে না। বৈরাগপুর গ্রামের স্থানীয় কৃষক একরামুল হক বলেন, ‘কহুয়া নদীর মুখ বালু ভরাট ও ব্রিজের নিচে ময়লা ফেলায় পানি প্রবাহ বন্ধ। এছাড়া মুহুরী নদীর উজানের অংশে ভারত বালু উত্তোলনের জন্য সেচের জন্য নদীতে কৃষকের অস্থায়ী বাঁধ কেটে দেওয়ায় ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী-কহুয়া নদীতে নাব্যতা সংকট তৈরি হয়েছে। পানির অভাবে সেচের জন্য ৩০টি স্কিম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলতি মৌসুমে দুই উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে বোরো চাষ করতে পারছেন না কৃষকরা। সীমান্তে পানি আটকে রাখায় বাংলাদেশের অংশে পানি প্রবাহ কমে গেছে। পানিপ্রবাহ না থাকায় কহুয়া নদী একেবারেই শুকিয়ে গেছে। সেচ পাম্প চালু করার কিছুক্ষণের মধ্যে পানির অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়।’
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পরশুরামে ৩ হাজার ২০০ হেক্টর ও ফুলগাজীতে ৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এসব জমিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি সেচের মাধ্যমে চাষাবাদ করে থাকে। কিন্তু এবার কহুয়া নদীতে পানি থাকায় দুই উপজেলার প্রায় ৩০টি সেচপাম্প বন্ধ হয়ে গেছে।
ফুলগাজীর পূর্ব ঘনিয়ামোড়া গ্রামের সেচ পাম্পের মালিক মনির আহমদ বলেন, ‘মুহুরী ও কহুয়া নদীর মোহনায় ১৫ থেকে ২০ বার বাঁধ দিয়ে কহুয়া নদীতে পানিপ্রবাহের চেষ্টা করা হয়। পরশুরামে অবৈধ বালু উত্তোলনের জন্য বারবার এসব বাঁধ কেটে দেওয়ায় জমিগুলোতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি কৃষক ও সেচপাম্প মালিকরা জানানোর পর তাৎক্ষণিক সার্ভেয়ার ও কৃষি অফিসের কর্মকর্তাকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’