এম.আর. রাজ, মহাদেবপুর (নওগাঁ)
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৫ ১২:২৮ পিএম
নওগাঁর মহাদেবপুরে কীটপতঙ্গ দমনের নামে ফসলে যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে কীটনাশক। সম্প্রতি উপজেলার চেরাগপুর গ্রামে। প্রবা ফটো
নওগাঁর মহাদেবপুরের কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব পড়ছে ফসলের মাঠে। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। কীটপতঙ্গ দমনের নামে কীটনাশক ব্যবহার পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকির সৃষ্টি করছে। বিষাক্ত বিষ ও রাসায়নিক প্রয়োগে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদিত ফসল খেলে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মহদেবপুর কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যানুসারে, উপজেলায় প্রতিবছর ৭২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে ধানসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ কৃষিজমিতে ফসল উৎপাদন করতে কৃষকরা যে পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করে তা ভয়াবহ আশ্চর্যজনক। কৃষকরা প্রতি বিঘা জমিতে ফসল উৎপাদনে প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম কীটনাশক তরল ও ৩০৫ মিলিগ্রাম ছত্রাকনাশক পাউডার ব্যবহার করে। সেই হিসাবে ৭২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৬৫ লিটার কীটনাশক তরল ও ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪৯ কেজি ছত্রাকনাশক পাউডার ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি ৫১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি প্রজাতির বীজের বদলে হাইব্রিড বীজ ব্যবহারের কারণেও কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্রয়োগ বাড়ছে। অধিক ফলনের আশায় বাছবিচার ছাড়াই কৃষক কীটনাশকের ব্যবহার বাড়াচ্ছেন। দুর্বল বীজের মাধ্যমে ফসলের মাঠে যে দুর্বল চারাগাছের উৎপাদন হয় তা সহজেই কীটপতঙ্গের আক্রমণের শিকার হয়। আর এটা রোধেই কৃষককে ফসলের মাঠে ব্যাপকমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে।
এসব কীটনাশক প্রয়োগের ফলে খেতের আশপাশের নদী, নালা, খাল-বিল এমনকি জলাভূমিতে তা ছড়িয়ে পড়ে উদ্ভিদ, সাপ, ব্যাঙ, মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী মারা যায়। কীটনাশক প্রয়োগের এক সপ্তাহ পর ফসল সংগ্রহ করার কথা থাকলেও অনেক কৃষক তা প্রয়োগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেয় সংগ্রহ করে বাজারজাত করছেন। ফলে ফসলি জমি হারাচ্ছে উর্বরাশক্তি, পরিবেশ হারাচ্ছে তার জীববৈচিত্র্য আর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগ-ব্যাধিতে।
মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খুরশিদুল ইসলাম বলেন, অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মানুষের হার্ট, কিডনি, লিভার, স্নায়ু, ত্বকসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে জন্মগত ত্রুটিযুক্ত সন্তান জন্ম দেওয়ার ঝুঁকিও থেকে যায়। এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হয় এই বিষক্রয়ায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, আমরা আইপিএমসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহারে কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়াও কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে জৈব সার, ফেরোমোন বড়ি এবং হাত দিয়ে পোকা দমনসহ যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা ধৈর্য ধরতে চায় না। তাৎক্ষণিক ফলাফল পেতে বিক্রেতাদের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে একের পর এক বিভিন্ন কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহার করে, যা জমি ও মানবস্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।