সাভার প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫ ১৬:৪১ পিএম
প্রবা ফটো
সাভারের নয়ারহাটে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে স্ত্রীর সামনে স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিলীপ হত্যা ও স্বর্ণ লুটের ঘটনায় ছয় ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র, লুট হওয়া স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ অর্থ।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকালে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ (সাভার সার্কেল) সুপার শাহিনুর কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তাররা হলো, কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার পিটুয়া বন্দের বাড়ি গ্রামের মো. হক ভূঁইয়ার ছেলে মো. রিপন মিয়া, পাবনা জেলার সুজানগর থানার চর ভবানীপুর গ্রামেরজোনাই প্রামাণিকের ছেলে মো. আরিফ প্রামাণিক, বাসস্ট্যান্ডের ফল ব্যবসায়ী এবং পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার সরাডাঙ্গী মৃত করিম শেখ ছেলে মো. শাহ আলম ও তার ছোট ভাই মো. আরমান শেখ, রাজশাহী জেলার কর্নহার থানার রাধানগর গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম বাবু এবং কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার বৃষ্টিপুর গ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে মো. মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ।
এসময় উদ্ধার করা হয় ১৩ ভরি স্বর্ণ, স্বর্ণ বিক্রয়ের ৭৬ হাজার টাকা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি চাপাতি।
পুলিশ জানায়, নয়ারহাট বাজারে স্বর্ণালয়ের মালিক দিলীপ কুমার দাসকে কুপিয়ে হত্যা পর ডাকাতি করে ডাকাত সদস্যরা দেশের বিভিন্নস্থানে পালিয়ে যায়। তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, ঘটনার রাতে ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য ইমরান, তার দুই ভাই শাহ আলম ও আরমান, রিপন, আরিফ, আকাশ, তালিম ডাকাতির উদ্দেশে একটা গাড়ি করে নয়ারহাট এলাকায় স্বর্ণের দোকান টার্গেট করে।
ইমরান ও আকাশ গাড়ির ভেতরে অবস্থান নেয়। বাকী সদস্যদের মধ্যে আরমান ও শাহ আলম ঘটনাস্থলের পাশে পাহারা দেয়, তালিম ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক তৈরি করে এবং রিপন ও আরিফ দুটো চাপাতি নিয়ে দিলীপের কাছে যায়। এ সময় দিলীপ ব্যাগ দিতে না চাইলে রিপন ও আরিফ তাকে কুপিয়ে জখম করে। পরে কালা মাসুদ স্বর্ণের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে গাড়িতে ওঠে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তারা ৮ জন গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার পর আশুলিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশন ওসি) সফিকুল ইসলাম সুমন জানান, আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনার সাথে জড়িত মূল আসামি ডাকাত রিপনকে সাভারের যাদুরচর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ, শাহ আলম এবং আরমানকে আশুলিয়া বাড়ইপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে রাজবাড়ির গোয়ালন্দ থেকে আরিফকে গ্রেপ্তার করে থানা নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরও জানান, বাড়ইপাড়া থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ৮ ভরি স্বর্ণ এবং স্বর্ণ বিক্রয়ের ৭৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয় এবং তাদের দেওয়া তথ্যমতে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতির স্বর্ণ ক্রয়ের সাথে জড়িত রাজশাহীর কর্ণহাট এলাকা থেকে লুণ্ঠিত ৫ ভরি স্বর্ণসহ ইব্রাহিম নামের আরও সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ (সাভার সার্কেল) সুপার শাহিনুর কবির বলেন, জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য সাভার, আশুলিয়া, রাজশাহী ও রাজবাড়ী জেলায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মোট ৬ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয় যাদের মধ্যে ৫ জন ডাকাত ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হত্যা ও স্বর্ণ ডাকাতি করে এবং একজন ডাকাতি মালামাল তার জিম্মায় রাখে। জানা যায় যে তারা চারজনসহ আরও ৮/৯ জন দীর্ঘ ৮/১০ বছর ধরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছে। তারা সবাই মূলত আন্তঃজেলা ডাকাত। তারা দিনের বেলা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে একত্র হয়ে বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি করে।
গত রবিবার (৯ মার্চ ) ঢাকা আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন ধামরাই সীমানা লাগোয়া ধলেশ্বরী নদীর তীরে সাভারের অন্যতম বৃহৎ বাজার নয়ারহাটে দিলীপ দাসের মালিকানাধীন দিলীপ স্বর্ণালয়ে রাত ৯টার দিকে ৭/৮ জনের একদল ডাকাত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। দোকানের ভেতরে এ সময় দিলীপ দাস ও তার স্ত্রী ছিলেন। তাদের জিম্মি করে ডাকাতদল স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা লুটপাট চালায়। এ সময় বাধা দিলে দিলীপকে কুপিয়ে জখম করে। পরে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় দিলীপ। এ ঘটনায় দিলীপের স্ত্রী স্বরস্বতী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।