মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫ ১৫:১৪ পিএম
প্রবা ফটো
রংপুরে আলুর দামে ধস নেমেছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে ৩ থেকে ৪ টাকা ক্ষতিতে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষককে। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে বাড়িতে আধুনিক পদ্ধতিতে ঘর তৈরি করে আলু সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জানা যায়, গত মৌসুমে রংপুরে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছিল। সে বছর কৃষকের আলু উৎপাদনে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা ব্যয় হলেও ক্ষেত থেকে আলু বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। প্রায় তিনগুণ লাভ হওয়ায় এ বছরও অধিক পরিমাণ আলু চাষে ঝুঁকেছিলেন কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় আলুর উৎপাদনও বেড়েছে। কিন্তু এ বছর সার, বীজ, কীটনাশক, শ্রমিক খরচসহ সবকিছুর দাম ছিল উর্ধ্বমূখী। আবহাওয়া ভাল থাকায় এ বছর আলু উৎপাদন ভাল হয়েছে। তবে উত্তোলন মৌসুমে পড়ে গেছে আলুর দাম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীসহ জেলায় এ বছর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমি। অতীতের রেকর্ড ভেঙে চাষ হয়েছে এবার আবাদ হয়েছে ৬২ হাজার ২৮০ হেক্টর। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত আবাদ হয়েছে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ টন। তবে তা ২০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে।
রংপুর সদর, পীরগাছা, তারাগঞ্জ এলাকার একাধিক কৃষক জানায়, এ বছর এক দোন (২৪ শতক) জমিতে কৃষকের প্রায় ৪১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে আলুর বীজ খরচ সাড়ে ১৭ হাজার টাকা, জমি প্রস্তুত ও রোপন খরচ ৩ হাজার টাকা, শ্রমিকসহ সেচ খরচ ২ হাজার টাকা, শ্রমিকসহ কীটনাশক খরচ ৫ হাজার টাকা, মূখ্য ও গৌণ সার খরচ ৭ হাজার টাকা, আলু উত্তোলন ও পরিবহন খরচ ৬ হাজার টাকা। প্রতি দোনে গড়ে আলু উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার কেজি। বর্তমানে আলু বাজারে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব হিসাব কষলে দেখা যায় প্রতি দোনে কৃষকের ক্ষতি প্রায় ৮ হাজার টাকা এবং কেজি প্রতি ক্ষতি ৩ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জে আলু উত্তোলণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষক বেলাল হোসেন। তার আবাদ করা কার্ডিনাল জাতের আলুর ভাল ফলন হয়েছে। ফলন ভাল হলেও হাসি নেই বেলাল হোসেনের মুখে। তিনি বলেন, এবছর আলু উৎপাদনে আবহাওয়া ভাল ছিল। তুলনামূলক কম কীটনাশক লেগেছে। তবে এ বছর বাজারে আলুর দাম নেই। প্রতি কেজিতে আমাদের ৩ থেকে ৪ টাকা করে লস হয়েছে।
তারাগঞ্জের ইকরচালীর আলু চাষী শিপুল ইসলাম বলেন, বাজারে আলুর দাম নেই বলে একটু দেরিতে আলু তুলছি। এরপরেও যে দাম রয়েছে, এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে। তাই বোরো আবাদের জন্য আলু তুলে ফেলছি। সরকার বাজারে আলুর ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করলে আমরা বাঁচতে পারতাম।
পীরগাছা মেকুরার কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগ বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করার জন্য বলতেছি। কিন্তু সেটি তো সমাধান না। কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেলে তো আবাদ করতে আগ্রহী হবে না। সরকারের উচিত প্রয়োজনে সরকারিভাবে ন্যায্য মূল্যে আলু ক্রয় করে কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি বছর রংপুর অঞ্চলে আলু চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত থাকে। এ বছর রংপুরে উত্তম কৃষি চর্চা-গ্যাপ অনুসরন করে এক একর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গ্যাপ অনুসরন করে আমরা আলু চাষ বৃদ্ধি করতে পারলে তা বিদেশে রপ্তানি করতে পারব।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রংপুর জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাকিল আকতার বলেন, উৎপাদন মৌসুমে আলুর যোগান বেশি হয়। তাই দাম কমে যায়। এ সমস্যা থেকে উত্তোরণে আমরা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে বাড়িতে আলু সংরক্ষণের ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। এখানে কৃষকরা কয়েক মাস আলু সংরক্ষণ করতে পারবে। প্রত্যেক কৃষক যদি নিজ বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে পারে তবে তারা পরে তা বিক্রি করে ভাল দাম পাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা রংপুর জেলার আলু চাষীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে তা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। কর্তৃপক্ষ আলু চাষীদের সাথে ব্যবসায়ী ও রপ্তানীকারকদের মধ্যে বাজার সংযোগ সৃষ্টিতে কাজ করছে। আশা করছি কৃষকরা আলুর ন্যায্য মূল্য পাবে।