রাজবাড়ীর ইটভাটা
শাখাওয়াত হোসেন সোহান, রাজবাড়ী
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫ ১৩:১৫ পিএম
ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঠ। সম্প্রতি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের টিএমবি ব্রিকস। প্রবা ফটো
রাজবাড়ীর ৯০টি ইটভাটা রয়েছে। কিন্তু অনেকগুলোর নেই কোনো ছাড়পত্র। সব ইটভাটাই তিনফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে। প্রতিটি ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার রয়েছে বলে অভিযোগ।
ইটভাটা মালিকরা বলেছেন, প্রতিটি ইটভাটা চালু রাখতে বছরে সরকারি নানা দপ্তরকে ম্যানেজ করতে ১০ লাখ টাকা দিতে হয়। তারা জানিয়েছেন, কয়লার দাম বেশি। তাই ভাটায় তারা কাঠ পোড়ান। অন্যদিকে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা দাবি করেছেন, তারা অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজবাড়ী পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৫টি উপজেলায় ৯০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ১৯টি ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন রয়েছে। বাকিগুলোর কোনো ছাড়পত্র নেই। এ বছর ৪৯টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে। ৭টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ২টি গুঁড়িয়ে দেওয়াসহ ভাটা মালিকদের জরিমানা করা হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গোয়ালন্দ, বালিয়াকান্দি, কালুখালী, রাজবাড়ী সদর ও পাংশা উপজেলার প্রতিটি ইটভাটাই তিনফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে। ইটভাটার পাশেই রয়েছে ঘনবসতি, স্কুল, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। ইটভাটার কালো ধোঁয়া পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
কালুখালীর কালিকাপুর ইউনিয়নের ঝাউগ্রামের এমবিবি ব্রিকস, বোয়ালিয়ার ৭৭৭ ব্রিকস, মোহনপুরের কেসিবি ব্রেকস, কেবি ব্রিকস ২টি, রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাগমারার এসবিএস ব্রিকস, রাজবাড়ী পৌরসভার চরলক্ষীপুরের এসবিবি ব্রিকস, বাগমারার কেএমবি ব্রিকস, খানখানাপুরের আরঅ্যান্ড ব্রিকস, গোয়ালন্দ উপজেলার ভাগলপুরের এসআইবি ব্রিকস, এএসবি ব্রিকস, রামকান্তপুরের রাবেয়া ব্রিকস, বালিয়াকান্দির এএমবি ব্রিকস, টিএমবি ব্রিকস, এডিবি ব্রিকসসহ প্রতিটি ইটভাটায় চলছে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব। রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা, বালিয়াকান্দি, কালুখালী উপজেলায় ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হলেও এর বিরুদ্ধে প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে লোকদেখানো অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয় আব্দুল আলিম, রেহেনা আক্তার, সুমন খান বলেন, ইটভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এই কাঠ পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এতে ফসলের ভীষণ ক্ষতি হয়। ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এই মাটি বহনকারী গাড়ি সড়কে চলাচল করায় সড়কের ক্ষতি হয়।
নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন ইটভাটা মালিক বলেন, কয়লার দাম বেশি হওয়ায় ইটের খরচ বেশি পড়ে। এ কারণে ভাটার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা কাঠ পোড়াচ্ছেন। প্রত্যেক ইটভাটায় প্রতিদিন ৩০০ মণ কাঠ লাগে। কীভাবে ভাটায় কাঠ পোড়াচ্ছি তা ডিসি অফিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, ইউএনও অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, উনারা ভালো বলতে পারবেন। ভাটা চালুর আগেই ডিসি ও ইউএনও অফিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, ভ্যাট-ট্যাক্সসহ সব মিলিয়ে ১০ লাখ টাকারও বেশি খরচ করে চালু করতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে পাংশা, কালুখালী, বালিয়াকান্দি, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) কোনো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেননি। তবে ইতোমধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় দুটি ইটভাটার বিরুদ্ধে ইউএনওর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে এবং ভাটা দুটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশীদ বলেন, ৪৯টি ইটভাটাকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। ৭টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ২টিকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়াসহ জরিমানা করা হয়েছে। তবে চলতি বছর পর্যন্ত কোনো ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র নবায়ন করা হয়নি। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। এ বিষয়ে জানতে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তারের মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।