টাঙ্গাইল প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫ ১১:৪১ এএম
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫ ১৩:১৭ পিএম
ফাইল ফটো
অবশেষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে যমুনা নদীর উপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম নবনির্মিত ‘যমুনা রেল সেতু’। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) উদ্বোধনী ট্রেন ‘যমুনা রেল সেতু’ দিয়ে মাত্র সাড়ে তিন মিনিটেই যমুনা নদী অতিক্রম করবে। আজ যমুনা রেল সেতুর পূর্বপ্রান্তে টাঙ্গাইল অংশে ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন প্রাঙ্গণে যমুনা রেলসেতুর উদ্বোধন শেষে বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে ট্রেনটি ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন থেকে সিরাজগঞ্জে সেতুর পশ্চিম প্রান্তে সায়দাবাদ রেলস্টেশন যাবে। এই উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রেলযোগাযোগ আরও সহজ হলো।
ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শাহীন মিয়া জানান, উদ্বোধন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি নিয়েছে রেলপথ কর্তৃপক্ষ। যমুনা রেল সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।
কর্মসূচির মধ্যে যমুনা রেল সেতু পূর্ব ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন থেকে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে সিরাজগঞ্জ পশ্চিম প্রান্তে সায়দাবাদ রেল স্টেশন পর্যন্ত উদ্বোধনী ট্রেনে অতিথি ও সংশ্লিষ্টরা যমুনা রেল সেতু পারাপার হবেন। সেখানে গিয়ে ১১টা ৪০ মিনিটে সায়দাবাদ রেল স্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করবেন। পরে তারা বেলা ১২টার দিকে সেতুর পূর্ব প্রান্তে ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশন আবার ফেরত আসবেন।
ডাবল ট্র্যাকের সেতু উদ্বোধনের খবরে রেলযাত্রীরা খুশি। তবে সিঙ্গেল ট্র্যাকের রেল লাইন হওয়ায় সেতুটির পুরোপুরি সুফল সহসাই মিলবে না বলে হতাশ তাদের কেউ কেউ। বিষয়টি স্বীকার করে স্টেশন মাস্টার শাহীন মিয়া জানান, নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ডাবল ট্র্যাক রেল লাইন তৈরি করা হবে। ফলে রেল যোগাযোগ, বাণিজ্য ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। প্রতিটি ট্রেন সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যেই যমুনা রেল সেতু অতিক্রম করবে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, যমুনা রেল সেতু দিয়ে ট্রেন পারাপারে আগের তুলনায় কম সময় লাগবে। এতে দুই পাড়েই সময় সাশ্রয় হবে। ডাবল লেনের সুবিধা পেতে হলে আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ার তানভীরুল ইসলাম বলেন, রেল সেতুতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে রেল সেতুতে পরবর্তীতে রং করার প্রয়োজন হবে না। ৪.৮ কিলোমিটার ডাবল লাইন ডুয়েলগেজ সেতুটি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে ঢাকার সাথে রেলপথের মাধ্যমে সংযুক্ত করবে।
এ ব্যাপারে ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শাহীন মিয়া বলেন, সেতু দিয়ে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে উদ্বোধনের দিন থেকে প্রথম পর্যায়ে সেতু নিয়ে ৯০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। এতে সময় লাগবে সাড়ে ৩ মিনিট। এর আগে যমুনা সেতু দিয়ে ট্রেন পারি হতে ২০ মিনিট লাগত।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি সকাল ৯টায় যমুনা রেল সেতু পূর্ব প্রান্ত টাঙ্গাইল এবং অপরদিকে সেতু পশ্চিমপ্রান্ত সিরাজগঞ্জ থেকে একসঙ্গে একজোড়া ট্রায়াল ট্রেন চলাচল শুরু করে। ওইদিন বিকাল পর্যন্ত একাধিকবার লোকোমোটিভ ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে পরীক্ষামূলক চলাচল সম্পন্ন করে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২ বছর বাড়ানো হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়। যার মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থয়ান এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে।
১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন পারাপার হতো। এই সমস্যার সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্র্যাকের ডুয়েল গেজের সেতু। এটি ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যানে নির্মিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।